মানব শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল ব্রেন বা মস্তিষ্ক। এর সুস্থতা ও কর্মক্ষমতার জন্য আপনি বিশেষ খাবারগুলো খাচ্ছেন কি? যদিও এধরনের খাবার সস্তা নয়। তারপরও এগুলো আমাদের খেতে চেষ্টা করতে হবে। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। যেমন বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি কিন্তু আমাদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। দামেও সস্তা। এজন্য আমাদের ভালো চিন্তা ও দক্ষতার জন্য মস্তিষ্ক ভালো রাখতে হবে। কারণ ব্রেন আমাদের শরীরের সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মস্তিষ্ক আমাদেরকে চিন্তা ও অনুভব করার ক্ষমতা দেয়। স্মৃতি গঠনে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ব্রেনের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। প্রয়োজন হয় বিশেষ যত্নের বিশেষ খাবারের। ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কোন খাবারগুলো সবচেয়ে কার্যকরী, তা জানার আগে মস্তিষ্ক উপযোগী খাবার বলতে আসলে কী বোঝায় তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভালো ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর খাবারগুলোই ব্রেন ফুড হিসেবে পরিচিত। এসব খাবার আমাদের ব্রেনকে শক্তি জোগায়, ব্রেনের কোষগুলোকে সজীব রাখে, স্মৃতি ক্ষয়ের মতো রোগগুলোকে দূরে রাখে। ব্রেইন ফুডগুলো আমাদের অন্ত্রে কিছু বিশেষ হরমোন আর নিউরো ট্রান্সমিটার তৈরি করে যা সরাসরি আমাদের ব্রেনে গিয়ে আমাদের বোধশক্তি, স্মৃতি গঠন ও মনোযোগ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
বাদামজাতীয় খাবারকে মস্তিষ্কের সুপার ফুড বলা হয়। যেমন; চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি। বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি কমে। মস্তিষ্ক ভালো রাখতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও বাদাম খাওয়া উপকারী। তবে বাদামের সঙ্গে অন্য বিশেষ খাবার খেলে মস্তিষ্ক আরও সতেজ থাকে।
১. ডার্ক চকলেট ব্রেনে রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বাদামের সঙ্গে ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকোলেট প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যাফেইন থাকায় স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বাদামের সঙ্গে এটি মিশিয়ে খেলে শরীরের ভিটামিন ইয়ের ঘাটতিও পূরণ হয়।
২. ব্লুবেরি ও বাদাম (আমন্ড) একসঙ্গে খেলে মস্তিষ্ক আরও সতেজ করবে। এই খাবার খেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়বে। কারণ ব্লুবেরিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে, তাছাড়াও বাদামে ভিটামিন ই থাকে। এসব উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
৩. দই ও বাদাম একসঙ্গে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এটি খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। দইয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকায় এটি অন্ত্রের জন্য খুব ভালো। আর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও ভালো কাজ করে। দই আর বাদাম খাওয়া খুব ভালো। কারণ এতে ভিটামিন ই থাকে।
৪. মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হলো ওটস। ওটস ও বাদাম একসঙ্গে খান। এতে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকে। তাছাড়াও থাকে ফাইবার। আর বাদামে ভিটামিন ই, ওমেগা ৩ থাকে। যা মস্তিষ্ক আরও সতেজ করতে সাহায্য করে। ওটস এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই, বি কমপ্লেক্স এবং জিংক। স্মৃতি ধূসরতা নিয়ন্ত্রণে দারুণ ভূমিকা রয়েছে এই ওটসের।
৫. নিয়মিত আখরোট ও বাদাম একসঙ্গে খাওয়া খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়তে থাকবে। এতে প্রচুর পরিমাণে ডিএইচএ থাকে। যা এক ধরনের ওমেগা । এটি মস্তিষ্কের জন্য খুব ভালো।
৬. পালং শাক ও ভিটামিন ই এর ভাণ্ডার। রান্না করা পালং শাকে আমাদের দৈনিক চাহিদার ২৫ পার্সেন্ট ভিটামিন ই থাকে যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। পালংশাক ও বাদাম একসঙ্গে খেলে ত্বক-অন্ত্র সবই ভালো থাকবে। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি বাড়বে। কারণ পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এই উপাদান মানসিক চাপ কমাতে খুব সাহায্য করে। তাছাড়া, বাদামে ভিটামিন ই থাকায় মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
৭. হলুদ ও বাদাম একসঙ্গে খেতে পারেন। হলুদের প্রচুর পরিমাণে কারকিউমিন থাকে। অন্যদিকে বাদামে ভিটামিন ই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপিাদান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
৮. মস্তিষ্ক ভালো রাখতে বাদামও ডিম একসঙ্গে খেতে পারেন । এতে স্মৃতিশক্তি বাড়ার পাশাপাশি মানসিক চাপও কমবে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি ই থাকে।
৯. গ্রিন টি ও বাদাম একসঙ্গে খেলে আপনার মানসিক চাপ কমবে। যদি রাতে এই দুটি উপাদান একসঙ্গে খান তাহলে ভালো ঘুমাতেও পারবেন।
১০. কলা ও বাদাম একসঙ্গে খাওয়া খুব ভালো। কলাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম থাকায় এটি মস্তিষ্ক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে মানসিক চাপ কমে। বাদামে থাকা ভিটামিন ই’ ত্বকের জন্য খুব ভালো।
সবশেষে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম ও মেডিটেশন করা উচিত। মনকে উদ্দীপিত করা এবং দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উৎফুল্ল থাকা উচিত। পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা ঘুম ও পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে আমরা ব্রেন বা মস্তিষ্ক আরো কর্মক্ষম করে তুলতে পারি।