শুক্র-শনিবার থেকে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে জাটকা, চেউয়া, বাইলা, টেংরা, পুটি, চাপিলাসহ অসংখ্য ছোট-বড় দেশীয় মাছ এবং জলজপ্রাণীর মরদেহ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে দশানি থেকে মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে এমন চিত্র দেখা গেছে। এতে নদী উপকূলীয় এলাকায় মরা মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এর আগেও মেঘনায় মাছ ও জলজপ্রাণীদের মরে ভাসতে দেখা গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিষয়টি তদন্ত হয়েছে। আবারও মাছ মরে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করতে হবে।
স্থানীয় লোকজন ও মৎসজীবীদের ভাষ্য, মেঘনা নদীতে ব্যাপক মাত্রায় বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালযুক্ত পানির কারণে দূষণের কারণে মাছ মরে ভেসে উঠছে। এবিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালযুক্ত দূষিত পানি প্রবাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশছে। এতে মেঘনার পানি দূষণ হওয়ায় নদীতে থাকা বিভিন্ন ধরনের দেশীয় মাছ মরে ভেসে উঠছে।’
ইলিশের জাটকা মরে ভেসে উঠায় শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন মেঘনা পাড়ের জেলেরা। এভাবে ছোট আকারের পোনা মারা পড়লে সামনে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে তাদের কপালে।
এছাড়া পঁচা মাছের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নদীপাড়ের বাসিন্দারা। পাশাপাশি দূষণের কারণে নদীর পানি খাওয়া ও ব্যবহার করতে পারছে না তারা। তাই কী কারণে বার বার নদীতে মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষণ হচ্ছে, তার সমাধান চান তারা।
ষাটনল এলাকার জেলে পলাশ বর্মন বলেন, ‘এই নদীই আমাদের জীবন। কিন্তু এখন এই পানিতে মাছ তো নেই, বরং বিষ ছড়িয়ে গেছে। কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছশূন্য হয়ে পড়বে নদী।’
দশানি এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগম বলেন, ‘বাচ্চারা নদীতে খেলতে যায়, গোসল করে। এখন তো মনে হচ্ছে পানিতে হাত দিলেও অসুস্থ হয়ে যাবে। আমরা নদীর পানি সব সময় ব্যবহার করি কিন্তু এখন পারছি না।’
পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠন ‘মতলবের মাটি ও মানুষ’-এর সভাপতি শামীম খান বলেন, ‘নদীকে কেন্দ্র করে হাজারো পরিবার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বারবার দূষণে নদী মৃতপ্রায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রয়োজন দ্রুত আন্তজেলা পরিবেশ কমিশন গঠন এবং কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। মানবিক ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়। এই ঘটনায় শুধু পরিবেশ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শত শত জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী। নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজারো মানুষের জীবিকা এখন হুমকির মুখে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মেঘনা নদীতে মাছ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার প্রতিবেদন অনুযায়ী নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে গিয়েছিল। অক্সিজেনের মাত্রা ৪.৫ থাকার কথা সেখানে মেঘনার ওই অঞ্চলগুলোতে রয়েছে ২ এর নীচে। কোথাও কোথাও অক্সিজেনের মাত্রা নেমে এসেছে ১ এর নীচে। এছাড়া নদীর তলদেশ দিয়ে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যালযুক্ত পানি বয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে আবার কেন মাছ মারা যাচ্ছে, সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। সরেজমিনে গিয়ে তদন্তের পর বিষয়টি জানতে পারবো।’