পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা রোজা পালন করেন। এ সময় সেহেরি খাওয়ার পর আমাদের কে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। ঋতুর পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আবহাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। তাই দেখা যাচ্ছে বর্তমানে উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সুস্থ থাকতে রোজায় পানির পানের সঠিক নিয়ম জানা প্রয়োজন।
পানিশূন্যতার ঝুঁকি ও লক্ষণ
রোজার দিনের একটা বড় সময় পানি খাওয়া হয় না, তাই শরীরে পানির অভাবে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়লে জিহ্বা ও গলা শুকিয়ে যায়। এছাড়া দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া, প্রেসার কমে যাওয়া কিংবা দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যারও অন্যতম কারণ এই পানির অভাব। তাই রোজা ভাঙার পর পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার উপর জোর দিতে হবে। ইফতার থেকে সাহারি পর্যন্ত কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি খেতে হবে। তবে খাওয়ার মাঝখানে পানি কিংবা একাবারে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি খেয়ে ফেলা যাবে না।
পানিশূন্যতা রোধে করণীয়:
- ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ২-২.৫ লিটার পানি পান করুন। এই পুরোটা সময় ৩০-৪০ মিনিট পরপর পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে।
- একবারে বেশি পানি পান করবেন না, বিরতি দিয়ে দিয়ে পানি পান করুন।
- তারাবির নামাজের সময় সঙ্গে পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
- স্যুপ, শসা এবং তরমুজের মতো পানিযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।
- এনার্জি পেতে ও শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করতে তাজা ফলের রস যেমন- মাল্টা, কমলা, ডালিম, আপেল, আঙুর রাখতে পারেন খাবারের মেন্যুতে।
- ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করুন। পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট পাউডার মেশাতে পারেন বা ডাবের পানি, এক চিমটি লবণ এবং এক চিমটি কমলার রস দিয়ে নিজেই তৈরি করতে পারেন ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়।
- ভাজাপোড়া এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং রোদে ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন। রোজা রেখে ভারি ব্যায়াম করতে যাবেন না। এতে ঘাম বেশি হয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার আশংকা থাকে।
- ইফতারে দই ও ফলের রস যোগ করুন। ৮৮ শতাংশ পানি ছাড়াও প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস দই। ইফতারে চিড়া বা ফল দিয়ে এক বাটি দই খেলে শরীর ঠান্ডা থাকবে।
- কোল্ড ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস, চা, এবং কফি এড়িয়ে চলুন। এসব পানীয় শরীরের পানি শূন্যতার ঘাটতি পূরণ করে না, বরং শরীরের ক্ষতি করে থাকে।
- শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন এবং তাদের পর্যাপ্ত পানি পানের ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।সেহরিতে যদি কিছু না খেয়ে রোজা থাকার অভ্যাস থাকে তাহুলে অন্তত কিছু তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। দুধও পান করতে পারেন। দুধে প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ লবণের উৎস হিসেবে দুধের বিকল্প নেই।
বিশেষ পরামর্শ:
- অতিরিক্ত গরম এবং পরিশ্রমের করলে প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
- সেহরি না খেয়ে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকুন।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে রমজানে সুস্থতা সহজ হয়ে উঠে।