আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক আমল ও বিশ্বাসের সম্মুখীন হই। আমাদের জন্য সাপ্তাহিক আমল রয়েছে। দৈনন্দিন আমল রয়েছে । বাৎসরিক আমল রয়েছে। এমনকি সারা জীবনের একবার এরকম আমলও রয়েছে। সেই বিবেচনায় রমজান মাস আমাদের জন্য একমাস ব্যাপী আমলের একটি প্যাকেজ। আমরা এই একমাস আমাদেরকে সর্বাত্ম পরিমান সংযত করি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। এবং আমরা সর্বোপরি আমাদেরকে বিলিয়ে দেই রবের ইবাদতে।
এই রমজান মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুমিনের জন্য।কেননা রাসূল সাঃ হাদিসের মধ্যে বলেন। বনী আদমের সমস্ত আমল তার জন্য। কিন্তু রোজা ব্যতীত । রোযা এটা আমার জন্য। এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিব। সুবহানাল্লাহ। ( সহীহ বুখারী, হাদিস নাম্বার ১৯০৪ )
আল্লাহ তায়ালা রোজাদারদের ব্যাপারে স্বয়ং এই প্রতিশ্রুত দিয়েছেন। সে জন্য এ মাসে কোন কোন আমল আমাদের জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । আসুন আমরা এখন তা জেনে নেই।
সিয়াম পালন করা
রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার নিকট সিয়াম থেকে কোন আমল বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা আল্লাহ তায়ালার স্বয়ং কোরআন কারীমে বলেন। তোমাদের যে ব্যক্তি এই মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে।
( সূরা বাকারা আয়াত নাম্বার ১৮৫)
আল্লাহ তায়ালার নিকট এই মাসে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রমজানের রোজা পালন করা।
যে মুসলিম ও আকিল ও বালেগ তার উপর এই রমজানের রোজা রাখা আবশ্যক। সে যদি বিনা কারণে রমজানের রোজা না রাখে তাহলে সে গুনাহগার হবে।
সমস্ত গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমরা রোজা থাকি শুধু আমাদেরকে সংযত ও গুনাহবিহীন করার জন্য। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মধ্যে বলেছেন হে মুমিনগণ আমি তোমাদের উপর রোজা আবশ্যক করে দিয়েছি যেভাবে তোমাদের পরবর্তীদের উপর আবশ্যক করেছিলাম যাতে তোমরা মুত্তাকী হও।
( সূরা বাকারা আয়াত নাম্বার ১৮৩ )
আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতের শেষ অংশে মুত্তাকী হওয়ার বলেছেন । যেন আমরা মুত্তাকী হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মুত্তাকী বানাতে চান পরহেজগার বানাতে চান।
আর রাসুল সাঃ হাদিসের মধ্যে বলেন। তুমি হারামকে পরিহার করো তুমি সব থেকে বড় আবিদ হয়ে যাবে।
( সুনানুত তিরমিজি হাদিস নাম্বার ২৩০৫)
সেজন্য যদি আমরা রমজান মাসে সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি । তাহলে আমরা হব সবথেকে বড় আবিদ । সেজন্য এ মাসে আমাদের যেন কোন ধরনের গুনাহ না হয় সেদিকে আমাদের সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
তারাবি নামাজ পড়া
এই রমজান মাসে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে রাতে তারাবির নামাজ পড়া।
রাসূল সাঃ হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমজানের রাত্রিতে দন্ডায়মান হলো আল্লাহ তায়ালা তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ।
( সহীহ বুখারী ২০০৮/ সহিহ মুসলিম ৫২৩ )
তারাবির নামাজ পড়া হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যদি আমরা প্রতিনিয়ত এই তারাবির নামাজকে ছেড়ে দেই তাহলে আমাদের গুনাহ হবে। সেজন্য আমাদের উচিত যেন আমরা অবশ্যই তারাবির নামাজ আদায় করি। তারাবির নামাজ না পড়লে আমাদের যে রোজা হবে না এরকম না। কিন্তু আমরা তারাবির নামাজ পড়বো রাসুল সাঃ সাহাবায়ে কেরাম তাবেঈন সালফে সালেহীনদের অনুসরণে তারাও তারাবির নামাজ পড়েছেন তাই আমরাও পড়ব।
কোরআন তেলাওয়াত করা
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনকে এই মাসের মধ্যে অবতীর্ণ করে এই মাসকে আল্লাহতালা দামি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বুঝার জন্য।
রমজান মাসের আমলসমূহের মধ্যে অন্যতম আমল হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত করা। পারলে অর্থ সমূহ বুঝে বুঝে পাঠ করা।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ) এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি নেকী হবে। আর একটি নেকী, দশটি নেকীর সমান হয়। আমি বলছি না যে, ’আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ। (অর্থাৎ, তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ’আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ।)
( সুনানুত তিরমিজি হাদিস নাম্বার ২৯১০ )
ইতিকাফ করা
রমজান মাসের শেষ দশকে গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে মসজিদে ইতিকাফ করা।
রাসুল সাঃ তার জীবদ্দশায় কোন সময় এই আমলকে ছাড়েন নাই। আয়েশা রাঃ হাদিস বর্ণনা করেন।
রাসুল সালাম সালাম রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন তিনাকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যু দেওয়া পর্যন্ত।
অপর হাদিসে আনাস রাঃ বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। অতঃপর তিনি একবার ইতিকাফ করতে পারেন না। অতঃপর যখন সামনের বছর আসে। তিনি বিশ দিন ইতেকাফ করেন।
আমরা এই দুটি হাদিস থেকে ইতিকাফের গুরুত্ব বুঝতে পারি। যে রাসূল সাঃ জীবদ্দশায় কখনো ইতেকাফ ছেড়ে দেন নাই। কিন্তু আমরা তার উম্মত হয়ে এ সুন্নত কখনো পালন করছি বলে আমাদের মনে হয় না। খুবই কম সংখ্যক লোক এই সুন্নতের উপর আমল করে। হায় আফসোস আমাদের জন্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে এই সুন্নতের উপর আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।
বেশি বেশি যিকির করা
মুসলিম অন্তরে গুনাহের দ্বারা যে কালো দাগ অঙ্কিত হয়। সেই কালো দাগ দুরবিত হয়ে যায় জিকিরের মাধ্যমে। সেজন্য জিকির মুমিনের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যাদের মুখ জিকির দ্বারা সর্বদা ভিজা থাকবে। তারা কিয়ামতের দিন হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে সুবহানাল্লাহ।
( সুনানু আবি দারদাআ )
আল্লাহ তায়ালা কোরআন কারিমে বলেন। হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি স্মরণ করো।
( সূরা আহযাব আয়াত নাম্বার ৪১)
রাসূল সাঃ হাদিসে বলেন। আল্লাহ তাআলার নিকট চারটি শব্দ বেশি পছন্দনীয়।
سُبْحانَ اللهِ ১ والْحَمْدُ لِلَّهِ، ২ ولا إلَهَ إلَّا اللَّهُ، ৩ واللَّهُ أكْبَرُ، ৪
বেশি বেশি দান করা
দানের মাধ্যমে মুমিনের অন্তর প্রফুল্ল হয়। মুমিন বান্দা অপরকে কিছু দিতে পারেই খুশি হয়। সেজন্যই তো মুমিনরা তাদের সম্পদ নির্দ্বিধায় দ্বীনের কাজে ব্যয় করতে একটুও ক্লান্ত হয় না। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি। কোন কোন সাহাবী তাদের সম্পূর্ণ সম্প দ জিহাদের জন্য দান করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ তাদের অর্ধেক সম্পদ দান করে দিয়েছেন।
রাসুল সাঃ হাদিসে বলেন উপরের হাত উত্তম নিজের হাত থেকে।
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের পরিচয় কোরআনে বলেন। মুমিন ঐ সমস্ত লোক যারা খরচ করে দিনে রাত্রে গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের জন্য রয়েছে প্রতিদান তাদের প্রতিপালনের নিকট এবং তাদের কোন ভয় নেই। এবং তারা পেরেশানি হবে না।
আল্লাহ তায়ালা অপর আয়াতে বলেন। যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজ করল তার জন্য তার দশ গুণ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বেশি বেশি দান করার তৌফিক দান করুক।
যে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করা হলো উপরোক্ত বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝেশুনে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বিল আলামিন।
মুফতি তারিক জামিল
ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক