সংবাদ শিরোনাম ::
Logo প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য Logo লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের গুঞ্জন! কেমন যেতে পারে মাসের শেষ দিনগুলো, যা বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস Logo প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Logo বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল Logo প্রকৃতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলার বার্তা নিয়ে এবছরের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস Logo জাতীয় নির্বাচন, ‘মানবিক করিডোর’, মব সহিংসতা নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর বাধা নেই Logo প্রাক বর্ষায় রাজধানীসহ নানাস্থানে মাঝারি-ভারী বৃষ্টি Logo শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে : রিজওয়ানা হাসান Logo শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শপথবাক্য পাঠ করানোর নির্দেশ

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র উদ্বোধন

দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র উদ্বোধন

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রটি করা হয়েছে। এটির অবস্থান জিয়া শিশুপার্ক রোডে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল)সকালে কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।

 

গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া ঘড়িয়াল এনে নতুন এই প্রজননকেন্দ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে। বন অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর এই উদ্যোগ যে শুধু ঘড়িয়াল সংরক্ষণের জন্য ন। তাদের প্রজননের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেরত পাঠানোর একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়েই কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছে।

নতুন প্রজননকেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। পাশাপাশি কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন রোদ পোহানোর সময় বা অন্য কোনো সময় ঘড়িয়ালকে বিরক্ত করা যাবে না, ডিম সংগ্রহ বা নষ্ট করা যাবে না, পুকুরে পলিথিন বা প্লাস্টিক ছুঁড়ে ফেলা যাবে না এবং পুকুরে কাপড় কাচা, মাছ ধরা ও গোসল করা যাবে না।

 

ঘড়িয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus, জলজ পরিবেশের এক শান্ত স্বভাবের বাসিন্দা। লম্বা সরু চোয়াল আর জলচর জীবনে নিখুঁত অভিযোজন এই প্রাণীটিকে আলাদা করেছে অন্যসব কুমির প্রজাতি থেকে। একসময় বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে ঘড়িয়ালের অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুরতায় এখন সেটি ইতিহাস।

নদীর পানি দূষণ, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, ডিম নষ্ট করে দেওয়া, প্রজননের সময় আশ্রয়স্থল নষ্ট হওয়া—সব মিলিয়ে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এই প্রজাতিটি। আন্তর্জাতিক সংস্থা CITES একে Appendix-1 ভুক্ত করেছে, যা নির্দেশ করে এটি বাণিজ্যিকভাবে অতি সুরক্ষিত প্রাণী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-তেও এটি একটি রক্ষিত প্রাণী।

 

বিপন্নপ্রায় ঘড়িয়াল ফের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে এই প্রজনন কেন্দ্র ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। আজ কেন্দ্রটির উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম।

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, ‘দেশে এর আগে কোথাও ঘড়িয়ালের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ হয়নি। রাজশাহীতে যদি সফল হয়, তাহলে এটা হবে বিরল ঘটনা।’

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র উদ্বোধন

আপডেট সময় ০৭:০০:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রটি করা হয়েছে। এটির অবস্থান জিয়া শিশুপার্ক রোডে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল)সকালে কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।

 

গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে এক জোড়া ঘড়িয়াল এনে নতুন এই প্রজননকেন্দ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে। বন অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর এই উদ্যোগ যে শুধু ঘড়িয়াল সংরক্ষণের জন্য ন। তাদের প্রজননের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফেরত পাঠানোর একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়েই কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছে।

নতুন প্রজননকেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। পাশাপাশি কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন রোদ পোহানোর সময় বা অন্য কোনো সময় ঘড়িয়ালকে বিরক্ত করা যাবে না, ডিম সংগ্রহ বা নষ্ট করা যাবে না, পুকুরে পলিথিন বা প্লাস্টিক ছুঁড়ে ফেলা যাবে না এবং পুকুরে কাপড় কাচা, মাছ ধরা ও গোসল করা যাবে না।

 

ঘড়িয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus, জলজ পরিবেশের এক শান্ত স্বভাবের বাসিন্দা। লম্বা সরু চোয়াল আর জলচর জীবনে নিখুঁত অভিযোজন এই প্রাণীটিকে আলাদা করেছে অন্যসব কুমির প্রজাতি থেকে। একসময় বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে ঘড়িয়ালের অবাধ বিচরণ ছিল। কিন্তু সময়ের নিষ্ঠুরতায় এখন সেটি ইতিহাস।

নদীর পানি দূষণ, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, ডিম নষ্ট করে দেওয়া, প্রজননের সময় আশ্রয়স্থল নষ্ট হওয়া—সব মিলিয়ে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এই প্রজাতিটি। আন্তর্জাতিক সংস্থা CITES একে Appendix-1 ভুক্ত করেছে, যা নির্দেশ করে এটি বাণিজ্যিকভাবে অতি সুরক্ষিত প্রাণী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-তেও এটি একটি রক্ষিত প্রাণী।

 

বিপন্নপ্রায় ঘড়িয়াল ফের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে এই প্রজনন কেন্দ্র ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। আজ কেন্দ্রটির উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম।

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, ‘দেশে এর আগে কোথাও ঘড়িয়ালের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ হয়নি। রাজশাহীতে যদি সফল হয়, তাহলে এটা হবে বিরল ঘটনা।’