বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপগুলো মিয়ানমারের নানা প্রদেশে দখল নিয়েছে, বলতে গেলে প্রায় পুরো মিয়ানমার জান্তা সরকারের হাতছাড়া। তবে হাল ছাড়ছেন না জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। তাকে অস্ত্র ও জ্বালানি দিয়ে যাওয়া রাশিয়াকে পক্ষে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই জেনারেল। এবার খবর এলো মিয়ানমার সরকার রাশিয়াকে ছয়টি হাতি উপহার দিয়েছে! মিন অং হ্লাইং মঙ্গলবার মস্কো সফরে গেলে হাতি উপহারের বিষয়টি সামনে এলো।
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি যুদ্ধবিমান কিনেছে মিয়ানমার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া ও মিয়ানমারের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার একটি প্রয়াস এই হাতি উপহার। অনেকে একে ‘হাতি কূটনীতি’ বলছেন।
মিয়ানমার-রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবছরের শুরুতেই উড়োজাহাজে করে হাতিগুলো রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, সঙ্গে ছিল হাতিগুলোর জন্য প্রশিক্ষকও। সেসময় রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা হাতিগুলোকে বরণ করেন।
তাস এবং কালুগা নিউজ জানিয়েছে, রাশিয়ায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ থিট লিন ওন জানিয়েছেন, ৬টি হাতির মধ্যে ৫টি নারী এবং ১টি পুরুষ হাতিশাবক রয়েছে। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হাতিগুলো নির্বাচন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “উভয় পক্ষই মেডিকেল পরীক্ষা এবং পরিবহন সহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।”
ক্ষমতা এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে হাতি মিয়ানমারে সম্মানিত হয়ে থাকে, দেশটির সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ স্থান রাখে। তাই নিজেদের সম্মানিত প্রাণীদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে হাতি কূটনীতি সারলো মিয়ানমার। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, ২০১৮ সালেও একই কাজ করেছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
এদিকে অর্থনৈতিক-সামরিক শক্তি বাড়াতে ব্যস্ত জান্তা প্রধান। ইতোমধ্যে ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জান্তাপ্রধান। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ২০২৪ সালে দুই দেশের বাণিজ্য ৫০ শতাংশ বেড়েছে। উপহারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনার এ বন্ধুত্বপূর্ণ উপহারের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। হাতিগুলো ইতোমধ্যেই মস্কোর চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।’ মিয়ানমারে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।
এছাড়া বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। মিয়ানমারে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিতেও সই হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পরমাণু বিদ্যুৎ কোম্পানি রোসাটমের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ১০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ কেন্দ্র নির্মাণ শেষে পরিচালনার দায়িত্বও রোসাটমের হাতে থাকবে।