সংবাদ শিরোনাম ::
Logo প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য Logo লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের গুঞ্জন! কেমন যেতে পারে মাসের শেষ দিনগুলো, যা বলছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস Logo প্রশাসনিক সমন্বয় ও সংস্কার ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব নয় : পরিবেশ উপদেষ্টা Logo বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল Logo প্রকৃতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলার বার্তা নিয়ে এবছরের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস Logo জাতীয় নির্বাচন, ‘মানবিক করিডোর’, মব সহিংসতা নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান Logo রিট খারিজ, মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর বাধা নেই Logo প্রাক বর্ষায় রাজধানীসহ নানাস্থানে মাঝারি-ভারী বৃষ্টি Logo শিল্পে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে : রিজওয়ানা হাসান Logo শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শপথবাক্য পাঠ করানোর নির্দেশ

রোজায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর যত্ন

রোজায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর যত্ন

গর্ভবতী নারীদের মধ্যে রোজা নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। কেউ বলে রোজা রাখা যাবে, আবার কেউ বলে যাবে না। প্রকৃতপক্ষে রোজা রাখা যাবে কি না তা নির্ভর করে গর্ভবতীর স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর। গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশ ও বেড়ে ওঠা অনেকাংশে নির্ভর করে গর্ভবতীর সঠিক পুষ্টিপ্রাপ্তির ওপর। এ সময় রোজা রাখা যাবে কি না, তা নির্ভর করে হবু মা ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার ওপর। এছাড়া ইসলাম ধর্মে গর্ভবতীর রোজা রাখার ওপর শিথিলতা রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীই রোজা রাখতে চান। এ সময় তাঁদের সঠিক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময় রোজা রাখলে তাঁদের শরীরে পরিবর্তন আসতে পারে।

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোজার হুকুম শিথিল করেছেন। (জামে তিরমিযী- ৭১৫)

গর্ভবতীরা কখন রোজা রাখতে পারবে

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই এ সময় মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রার পুষ্টি সরবরাহ জরুরি। তাই পুষ্টিবিদের মতে, গর্ভের প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো। তবে রাখতে চাইলেও ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। মধ্যবর্তী ৩ মাস বা সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার এ মা ও গর্ভস্থ শিশুর কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলে এ সময় মায়ের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী রোজা রাখলে করণীয়

সাহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাবার: গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখলে অবশ্যই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ফলমূল, শাকসবজি, ফলের রস দিয়ে তৈরি শরবত বেশি করে খেতে হবে। যাতে করে মা ও শিশু দুইজনের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত, যদি তাঁদের কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা থাকে—যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা। এসব ক্ষেত্রে রোজা রাখায় বিধিনিষেধ থাকতে পারে।

সঠিক পুষ্টি গ্রহণ

অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য সঠিক পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত রমজান মাসে। সাহ্‌রিতে শক্তিদায়ক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত, যেমন ডিম, দই, বাদাম, সবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। ইফতারে ফ্যাট, প্রোটিন এবং শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত, যেমন স্যুপ, সালাদ, মাংস, ভাত ও ফল। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা দরকার। কারণ, রোজার সময় পানিশূন্যতা থেকে শরীর দুর্বল হতে পারে। সাহ্‌রি ও ইফতার—দুই সময়ে পানি ও শরবত পান করা উচিত।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

অন্তঃসত্ত্বা নারীরা রোজা রাখলে ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন, বিশেষত দিনের বেলা। তাই তাঁদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ও দিনে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে। একটানা বেশি সময় না জেগে, শরীরের জন্য নিয়মিত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ

রোজা রাখলে শারীরিক অবস্থা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি শরীরে কোনো অস্বস্তি বা দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়, তবে উচিত রোজা ভেঙে বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

মানসিক চাপ থেকে মুক্তি

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মানসিক চাপে হরমোনাল পরিবর্তন হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার জন্য অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। তাই তাঁদের উচিত মানসিক শান্তি বজায় রাখা ও চাপমুক্ত থাকা।

পর্যাপ্ত পানি পান

পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। সাহ্‌রি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত; যাতে শরীর আর্দ্র থাকে এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় থাকে। পানি ও শরবত গ্রহণ করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ত্বকও ভালো থাকে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উচিত, নিয়মিত গাইনোকোলজিস্ট বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান এবং মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো; যাতে যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যায়।

রোজা না রাখার বিকল্প

যদি অন্তঃসত্ত্বা নারী শারীরিক কারণে রোজা রাখতে না পারেন, তবে ইসলামি বিধানে তাঁর রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে।

পরিশেষে একটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই সেই শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার দায়িত্ব অবশ্যই সমাজের এবং পরিবারের দায়বদ্ধতা আছে সবার,তাই গর্ভকালীন মা ও শিশুর যত্ন নেওয়া সবারই প্রয়োজন।

আপলোডকারীর তথ্য

প্রকৃতির প্রতিশোধ: সংকটে জীববৈচিত্র্য

রোজায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর যত্ন

আপডেট সময় ০২:২০:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

গর্ভবতী নারীদের মধ্যে রোজা নিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে। কেউ বলে রোজা রাখা যাবে, আবার কেউ বলে যাবে না। প্রকৃতপক্ষে রোজা রাখা যাবে কি না তা নির্ভর করে গর্ভবতীর স্বাস্থ্য ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর। গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশ ও বেড়ে ওঠা অনেকাংশে নির্ভর করে গর্ভবতীর সঠিক পুষ্টিপ্রাপ্তির ওপর। এ সময় রোজা রাখা যাবে কি না, তা নির্ভর করে হবু মা ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার ওপর। এছাড়া ইসলাম ধর্মে গর্ভবতীর রোজা রাখার ওপর শিথিলতা রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীই রোজা রাখতে চান। এ সময় তাঁদের সঠিক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময় রোজা রাখলে তাঁদের শরীরে পরিবর্তন আসতে পারে।

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোজার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোজার হুকুম শিথিল করেছেন। (জামে তিরমিযী- ৭১৫)

গর্ভবতীরা কখন রোজা রাখতে পারবে

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই এ সময় মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রার পুষ্টি সরবরাহ জরুরি। তাই পুষ্টিবিদের মতে, গর্ভের প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো। তবে রাখতে চাইলেও ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। মধ্যবর্তী ৩ মাস বা সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার এ মা ও গর্ভস্থ শিশুর কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলে এ সময় মায়ের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী রোজা রাখলে করণীয়

সাহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাবার: গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখলে অবশ্যই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ফলমূল, শাকসবজি, ফলের রস দিয়ে তৈরি শরবত বেশি করে খেতে হবে। যাতে করে মা ও শিশু দুইজনের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত, যদি তাঁদের কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা থাকে—যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা। এসব ক্ষেত্রে রোজা রাখায় বিধিনিষেধ থাকতে পারে।

সঠিক পুষ্টি গ্রহণ

অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য সঠিক পুষ্টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত রমজান মাসে। সাহ্‌রিতে শক্তিদায়ক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত, যেমন ডিম, দই, বাদাম, সবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। ইফতারে ফ্যাট, প্রোটিন এবং শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত, যেমন স্যুপ, সালাদ, মাংস, ভাত ও ফল। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা দরকার। কারণ, রোজার সময় পানিশূন্যতা থেকে শরীর দুর্বল হতে পারে। সাহ্‌রি ও ইফতার—দুই সময়ে পানি ও শরবত পান করা উচিত।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

অন্তঃসত্ত্বা নারীরা রোজা রাখলে ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন, বিশেষত দিনের বেলা। তাই তাঁদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ও দিনে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করবে। একটানা বেশি সময় না জেগে, শরীরের জন্য নিয়মিত বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ

রোজা রাখলে শারীরিক অবস্থা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি শরীরে কোনো অস্বস্তি বা দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা অনুভূত হয়, তবে উচিত রোজা ভেঙে বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

মানসিক চাপ থেকে মুক্তি

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মানসিক চাপে হরমোনাল পরিবর্তন হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার জন্য অস্বাস্থ্যকর হতে পারে। তাই তাঁদের উচিত মানসিক শান্তি বজায় রাখা ও চাপমুক্ত থাকা।

পর্যাপ্ত পানি পান

পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। সাহ্‌রি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত; যাতে শরীর আর্দ্র থাকে এবং শরীরের সঠিক কার্যক্রম বজায় থাকে। পানি ও শরবত গ্রহণ করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ত্বকও ভালো থাকে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উচিত, নিয়মিত গাইনোকোলজিস্ট বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান এবং মায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো; যাতে যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যায়।

রোজা না রাখার বিকল্প

যদি অন্তঃসত্ত্বা নারী শারীরিক কারণে রোজা রাখতে না পারেন, তবে ইসলামি বিধানে তাঁর রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে।

পরিশেষে একটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই সেই শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার দায়িত্ব অবশ্যই সমাজের এবং পরিবারের দায়বদ্ধতা আছে সবার,তাই গর্ভকালীন মা ও শিশুর যত্ন নেওয়া সবারই প্রয়োজন।