অতিরিক্ত ওজন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। একইসঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম ও সঠিক ডায়েট অতি জরুরি। রোজার মাসের ডায়েট বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই আলাদা হয়। পবিত্র রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারে সুস্বাদু খাবার খাওয়ার ইচ্ছে আপনার হতেই পারে। অবশ্য বেশিরভাগই এই এক মাসে কযেক কেজি ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই না? তবে এসময় ইফতারে নানা রকম মুখরোচক খাবার বিশেষ করে ভাজা খাবার এবং মিষ্টি খাওয়ার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ওজন বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি রোজার মাসে সেহরি ও ইফতারে খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে পারেন তাহলে ওজন কমানো বেশ সহজ হয়ে যাবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
যারা বছরের অন্য সময় কোনো একটি ডায়েট প্ল্যান মেনে চলেন, তাদের জন্য রমজান মাসে একই প্ল্যান মেনে চলা সম্ভব হয় না। আবার অনেকে মনে করেন, রোজার মাসে আলাদা ডায়েট প্ল্যান দরকার নেই। সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে এমনিতেই ওজন কমে যাবে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। আমরা সাধারণত ৩ বেলা খাই। রোজার সময়ও ইফতার, রাত আর সেহেরি মিলিয়ে ৩ বেলাই কিন্তু খাচ্ছি। এ ছাড়া, রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থেকে আমরা সেহেরি ও ইফতারে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। ফলে হিসেব করলে অন্য সময়ের চেয়ে খাওয়া আরও বেশি হয়ে যায়। ফলে ওজন কমার বদলে বেড়ে যায় অনেকের।
সাহরির জন্য
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে সেহেরি। সারাদিন আপনার শরীরে শক্তি যোগান দেওয়ার জন্য কী কী আইটেম সেহেরিতে থাকতে হবে, তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। অনেকেই রাতে অনেক বেশি খাবার খেয়ে সেহেরিতে খেতে চান না। সেহেরিতে প্রোটিন, আয়োডিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ফল, সেদ্ধ সবজি, সবজি সালাদ, দুধ বা টক দই, ভাত বা রুটি, মাছ বা মুরগির মাংস বা ডিম ও ডাল খাওয়া যেতে পারে। এগুলো খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
১. দুই গ্লাস পানি, পাঁচ থেকে সাতটি ভেজানো বাদাম, একটি আখরোট এবং আপনার পছন্দের একটি ফল দিয়ে সেহরি শুরু করুন। পুষ্টিবিদ মোহিতার মতে, আপনি আপেল, পেঁপে, ডালিম এবং আঙুর থেকে বেছে নিতে পারেন।
২. আপনার পছন্দের সবজির সঙ্গে তিনটি ডিম রান্না করে এবং একটি টোস্ট বা পরোটার সঙ্গে মুড়িয়ে নিন। বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, ডিমের পালং শাক, মাশরুম, বেল মরিচ বা টমেটো যোগ করতে পারেন। এরপর সেটি খেয়ে নিন।
ইফতারের জন্য
ইফতারের সময় একবারে সারাদিনের খাবার খেয়ে ফেলা যাবে না। এতে শরীরের উপকারের থেকে অপকার বেশি হয়। ইফতারে কোনোভাবেই পেট ভর্তি করে খাবার খাওয়া যাবে না। লেবুর শরবত, একটি খেজুর, সালাদ, টক দই, মৌসুমি ফলমূল বা জুস দিয়ে ইফতার সেরে ফেলুন। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা চিনি ছাড়া লেবুর শরবত বানিয়ে খাবেন। ভাজাপোড়া থেকে একদমই দূরে থাকবেন। বেশি ভাজাপোড়া খেলে বদহজম, বমি, গ্যাস হতে পারে।
১. খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙুন, তারপরে এক গ্লাস পানি, ডাবের পানি, লাচ্ছি ইত্যাদি খান।
২. এর পরে এক কাপ চা এবং কিছু ভাজা ছোলা খেতে পারেন।
রাতের খাবারের জন্য
রোজার মাসে অনেকেই রাতের খাবার খেতে চান না। তবে রাতের খাবার বাদ দেওয়া উচিত না। রাতে খেলে শরীরের পুষ্টির মাত্রা ঠিক থাকে এবং শরীর পরিমিত ক্যালরি পায়। ইফতারে পরিমাণ মত খেলে রাতের খাবার অবশ্যই দরকার হবে।রাতের খাবারের জন্য হালকা খাবার বেশি উপযুক্ত। এমনিতেও রাতে খুব স্বল্প পরিমাণ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে রমজান মাসে ওজন কমানোর জন্য এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকতে হবে।
১. এক কাপ মুরগি বা মাছ বা চিংড়ি রাখুন।
২. দুই কাপ ভাজা বা ভাপানো সবজি যোগ করুন। সালাদও খেতে পারেন।
৩. কিছু ভাত বা রুটি নিন।
৪. মিষ্টি বা চকলেটের একটি ছোট টুকরো ডেজার্টের জন্য নিন।
রমজানে ওয়ার্কআউট খাবারের পরিকল্পনা
সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার পর অন্তত আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করার বা দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। পুষ্টিবিদ মোহিতা আরও বলেছেন যে, আপনি বাড়িতে কিছু ওজন উত্তোলন বা কম প্রভাবের কার্ডিও করতে পারেন।
– জিমে যাওয়ার আগে বা হাঁটতে যাওয়ার আগে একটি কলা খান।
– ওয়ার্কআউটের পরে পানির সঙ্গে প্রোটিন পাউডার মিশিয়ে খান।
অবশ্যই সপ্তাহে একটি দিন নিজের পছন্দের খাবার উপভোগের জন্য রাখতে হবে তবে খাবারের পরিমাণের দিকে নজর রাখতে হবে।