রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য সেহেরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও সেহেরি খাওয়ার ফজিলত অনেক। এটি কেবল একটি খাবার নয়, সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎসও বটে। সুস্থভাবে রোজা পালন করার জন্য সঠিক পুষ্টি দরকার। সেহেরিতে সঠিক খাবার গ্রহণ করলে সারাদিন সুস্থ ও সতেজ থাকা যায়। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশের অনেকের সেহেরির খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বেশিরভাগ মানুষই তেল-মসলাযুক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন, যা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। তাই, রোজায় সুস্থ থাকতে সেহেরির খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি।
সেহেরিতে পুষ্টিকর খাবার খেলে সারাদিন পর্যাপ্ত এনার্জি পাওয়া যায়। এছাড়া মাথাব্যাথা দূর্বলতার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এ জন্য সেহরিতে এমন খাবার খেতে হবে, যা শরীরকে আর্দ্র রাখতে এবং পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করবে।
সেহেরিতে যা খাওয়া উচিৎ
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
সেহরিতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ডিম, মাছ, মাংস, ছোলা খেলে শরীর তা থেকে ধীরে ধীরে শক্তি শোষণ করে ও তাড়াতাড়ি ক্ষুধা অনুভব হয় না।
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার
ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেলে তা দ্রুত হজম হয় না, যা দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই সেহরিতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ওটস, ব্রাউন রাইস বা রুটি খাওয়া উচিত।
পূর্ণ শস্যজাত খাবার
পূর্ণ শস্যজাত খাবার (যেমন-ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া ইত্যাদি) ধীরে ধীরে শক্তি ছাড়ায়, এই ধরনের খাবারে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতিতে চালিত করে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সেহরিতে এসব খাবার খেলে দীর্ঘ সময় আপনার ক্ষুধা লাগবে না।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের জন্য উপকারী। যেমন- বাদাম, তিসি বীজ, চিয়া সিড ইত্যাদি সেহরিতে খেলে ক্ষুধা কমে যায় এবং এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ রাখবে।
ফলমূল
ফল প্রাকৃতিক শর্করা এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘ সময় ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, কলা এবং তরমুজ সেহরির জন্য উপযোগী। কলা পটাশিয়াম এবং ফাইবারে ভরপুর, যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং তরমুজে প্রচুর পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। এছাড়া, আপেল, কমলা, পেঁপে ইত্যাদি ফলও সেহরির জন্য ভালো। এসব ফলেও রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেল, যা শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শক্তি প্রদান করে।
ইসবগুল
ইসবগুল হচ্ছে প্রাকৃতিক ফাইবার যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এটি পানি শোষণ করে পেটকে পূর্ণ রাখতে সাহায্য করে।
দুধ ও দই
দুধ ও দই সেহরির জন্য ভালো অপশন। এতে থাকা প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য উপকারী। দই পেটে থাকা খাবার দীর্ঘ সময় ধরে হজম হতে সাহায্য করে, যা ক্ষুধা কমাতে সহায়ক।
পানি
সেহেরিতে খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি পান করুন, তারপর খাবার খাওয়া শুরু করুন। পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পানির অভাব শরীরে তৃষ্ণা ও ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। তাই সেহরির সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
খেজুর
রোজায় খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইফতার ও সেহেরিতে খেজুরের উপকারিতা অসীম। খান। খেজুরের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ফ্রুকটোজ। এতে অনেক আঁশ রয়েছে। সেহেরিতে খেজুর খেলে দিনভর কর্মক্ষম থাকার শক্তি পাওয়া যায়। তাই অনন্ত দুটি খেজুর খাওয়া উচিৎ।
চর্বি ছাড়া মাংস
চর্বি ছাড়া মাংস সেহরিতে খাওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে মুরগির মাংস খেতে পারেন। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা অনেকটা পূরণ হবে।
স্যুপ
সেহরির সময় স্যুপ হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এমনকি ইফতারেও খেতে পারেন স্যুপ। ডিম, মুরগির মাংস, চিংড়িমাছ, মাশরুম আর বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে স্যুপ রান্না করলে এটি কেবল দেহকে আর্দ্র রাখবে না, শক্তিও ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
সেহেরিতে যা খাবেন না:
১.এ সময় শুকনো ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না। এ ধরনের খাবার শরীরকে পানিশূন্য করে।
২.সাহরির সময় চা বা কফি পান থেকে বিরত থাকুন। এগুলো পানিশূন্যতা বাড়ায়।
৩.উচ্চ চর্বিসমৃদ্ধ এবং প্রচুর তেলে ভাজা খাবার সেহেরিতে খাবেন না। এছাড়াও, পাকস্থলীতে অস্বস্তি করে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪.এ সময় অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার পরিহার করুন। যেমন: আচার, বেশি মসলাজাতীয় খাবার, প্রকিয়াজাত খাবার, ভারি ডেজার্ট ও কোমল পানীয় ইত্যাদি। এবং কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সেহেরিতে পুষ্টিকর খাবার খেলে সারাদিন রোজা রাখা অনেকটা সহজ হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। ক্ষুধামন্দা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।