হাঁটু শরীরের বড় ও ওজন বহনকারী জোড়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। হাঁটুর জোড়া ওপরের দিক থেকে ঊরুর হাড় (ফিমার) ও প্যাটলা এবং নিচের দিক থেকে লেগের হাড়ের (টিবিয়া) সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট থাকে। এগুলো হলো ইলাসটিক টিস্যু, যা এক হাড় অন্য হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে, জোড়ার শক্তি প্রদান ও জোড়ার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরি একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে ক্রীড়াবিদদের মধ্যে। লিগামেন্ট হল হাড়কে হাড়ের সাথে সংযুক্ত করে রাখা শক্তিশালী টিস্যু। হাঁটুর লিগামেন্টগুলি হাঁটুকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। যখন এই লিগামেন্টগুলি ছিঁড়ে যায় বা আংশিকভাবে ছিঁড়ে যায়, তখন হাঁটু অস্থির হয়ে পড়তে পারে এবং ব্যথা হয়।
হাঁটুর লিগামেন্ট: এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, পোসটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, মিডিয়ার কোল্যাটারাল লিগামেন্ট, ল্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট।
ইনজুরির কারণ:
হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরির সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল আকস্মিক মোচড় বা দিক পরিবর্তন। এটি প্রায়ই খেলাধুলা করার সময় ঘটে। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে: পড়ে যাওয়া, সরাসরি আঘাত, বয়সজনিত পরিবর্তন ইত্যাদি; হঠাৎ মোচড়ানো গতি দ্বারা এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট সবচেয়ে বেশি ইনজুরি হয়। আঘাত, রিকশা থেকে পড়ে গেলে, গাড়ি বা মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় লিগামেন্ট ইনজুরি হয়। ফুটবল, বাস্কেটবল, কাবাডি ও হা-ডু-ডু খেলোয়াড়দের লিগামেন্ট ইনজুরি বেশি হয়। মই থেকে পড়ে গেলে, ওপর থেকে লাফ দিয়ে পড়লে, গর্তে পড়ে গেলে, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এক স্টেপ ভুল করলে লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
লক্ষণ
প্রথমে তীব্র ব্যথা পর ক্রমে ব্যথা কমে আসে। ব্যথা হাঁটুর বাইরের পাশে ও পেছনে অনুভূত হয়। হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়। আঘাতের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়। ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটু নড়াচড়া করা যায় না। দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হয় হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারবেন। হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরির লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে; হাঁটুতে তীব্র ব্যথা, ফোলা, হাঁটু অস্থির বোধ করা, হাঁটুতে তাল মিলিয়ে চলতে অসুবিধা, হাঁটু লক হয়ে যাওয়া ইত্যদি বিষয়।
চিকিৎসা
হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরির চিকিৎসা আঘাতের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। হালকা আঘাত সাধারণত বিশ্রাম, বরফ, সংকোচন এবং উঁচুতে রাখা (RICE) পদ্ধতি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। আরও গুরুতর আঘাতের জন্য সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমে হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। বরফের টুকরা তোয়ালে বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা বা ফোলা কমবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। এ পদ্ধতি আঘাতের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফোলা কম হবে। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে ৭ থেকে ১০ দিন। প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে উঠলে হাঁটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে লিগামেন্টের আঘাত এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করা যায়। এক্স-রে ও এমআরআইয়ের সাহায্য নিতে হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
সার্জারির আগে:
ফিজিওথেরাপি: শক্তি বাড়ানো এবং গতিশীলতা উন্নত করার জন্য ফিজিওথেরাপি করা হয়।
ওষুধ: ব্যথা এবং ফোলা কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়।
সার্জারির পর:
পুনর্বাসন: সার্জারির পর পুনর্বাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাঁটুকে পূর্বের মতো শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
প্রতিরোধ
হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরি প্রতিরোধ করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
ওয়ার্ম আপ: যে কোনো শারীরিক কার্যকলাপ শুরু করার আগে ভালো করে ওয়ার্ম আপ করা।
শক্তিশালীকরণ ব্যায়াম: হাঁটুর পেশীগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা।
সঠিক জুতা পরা: খেলাধুলা করার সময় সঠিক ধরনের জুতা পরা।
ভালো টেকনিক: খেলাধুলা করার সময় সঠিক টেকনিক ব্যবহার করা।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন:
যদি আপনার হাঁটুতে তীব্র ব্যথা, ফোলা বা অস্থিরতা হয়, তাহবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিক চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে এটি থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব।