একের পর এক মামলা, ঘাতকের বুলেট থেকে বেঁচে লড়াকু ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয় ছিল ২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। অবশেষে বৃদ্ধ ও চরম বিতর্কিত বাইডেন আমলের অবসান ঘটিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন ট্রাম্প। আমেরিকার স্থানীয় সময় সোমবার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি আমেরিকার শাসনভার হাতে পেয়েছেন তিনি। আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার অভিষেক ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু হচ্ছে।’
বিচার ব্যবস্থা, অভিবাসন নীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব কিছু আমূল বদলে দেয়ার ঘোষণায় ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট অফিসে বসেই সেসব ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে রেকর্ডসংখ্যক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলো এক নজরে দেখা যাক:
‘জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব’ পদ্ধতি বাতিল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অভিবাসীদের দৌড়াত্ম ঠেকাতে শক্তভাবে নেমেছেন। এরই অংশ হিসেবে শপথ গ্রহণের প্রথম দিন তিনি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব প্রাপ্তির পদ্ধতি বাতিল করেছেন।
প্রায় ১৫০ বছর ধরে আমেরিকান ভূখণ্ডে জন্ম নেয়া শিশুরা ‘জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব’ পেয়ে আসছেন। ট্রাম্প এই সাংবিধানিক অধিকারকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেন।
তবে তার এই আদেশ আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
মেক্সিকো সীমান্তে জরুরী অবস্থা জারি, বাতিল হলো অভিবাসন অ্যাপ
দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পরই মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি আমেরিকা–মেক্সিকো সীমান্তে সৈন্য পাঠাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প বার বার বলে আসছিলেন, রিমেইন ইন মেক্সিকো বা ‘মেক্সিকোতেই থাকো’ নীতি ফের কার্যকর করা হবে। প্রেসিডেন্ট হয়ে তা-ই বাস্তবায়ন করছেন।
ট্রাম্প আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের ‘ধ্বংসাত্মক’ নীতিগুলো ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে’ বাতিল করা হবে। এর অংশ হিসেবে বাতিল হয়েছে সিবিপি ওয়ান অ্যাপ। নতুন প্রশাসন অ্যাপ বাতিল করার কয়েক ঘণ্টা আগে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়। ওই অ্যাপের মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের জন্য আগে থেকেই বুকিং করার ব্যবস্থা ছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।
নির্বাহী আদেশে সইয়ের পর ট্রাম্প বলেন, ‘এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমেরিকার কাছ থেকে এতদিন ‘‘অন্যায়ভাবে বেশি অর্থ’’ দাবি করত।’
সংস্থাটিতে অন্যতম আর্থিক যোগানদাতা আমেরিকা। ডব্লিউএইচওর মোট তহবিলের ১৮ শতাংশ দিয়ে থাকে দেশটি। ফলে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে সংস্থাটি তহবিল সংকটে পড়বে।
ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় ১৬০০ জনকে ক্ষমা
ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার অভিযোগে বাইডেন আমলে গ্রেপ্তার প্রায় ১ হাজার ৬০০ জনকে কারামুক্ত করার আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের পর ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে জড়ো হয় ট্রাম্প সমর্থকরা, বেঁধে যায় দাঙ্গা। এরপর বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক ধরপাকড়ের শিকার হয় ট্রাম্প সমর্থকরা। কয়েক হাজার মানুষকে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার সমর্থকদের মুক্তি দেওয়ার ইঙ্গিত কয়েক মাস আগেই দিয়েছিলেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি বিষয়টি বাস্তবায়ন করলেন।
এছাড়াও শপথ গ্রহণের পর পরই অফিসে বসেই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে আবার প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি প্রতিষ্ঠা করা, ‘লৈঙ্গিক মতাদর্শ থেকে নারীদের সুরক্ষা’ এবং ‘জৈবিক সত্যকে ফেডারেল সরকারে পুনঃপ্রতিষ্ঠা’, টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা এবং নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প।