২৫ অক্টোবর, প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবুর জন্মদিন। বিশেষ এই দিনের সকালটা তিনি বরাবরই কাটাতে ভালোবাসেন শিশুদের সাথে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শনিবার সকালে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) রেডওয়ে হল কয়েকশ শিশুর কলকাকলীতে যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরো প্রাণোচ্ছল বাগিচায়।

বাংলার প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবাসা মানুষটির জন্মদিনের আয়োজনে বাড়তি মাত্রা যোগ করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ ভ্যালেরি অ্যান টেইলরের উপস্থিতি।

আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল ভ্যালেরির বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত উইলিয়াম এন্ড মেরি টেইলর স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত গান এবং মনোজ্ঞ নৃত্য।

এসময় মুকিত মজুমদার বাবুর তারুণ্য সহ তার কর্মজীবনের টুকরো ছবি দিয়ে বানানো একটি বিশেষ গানের ভিডিও প্রদর্শন করে প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাব।

এরপর হুইল চেয়ারে মঞ্চে আসে শিক্ষার্থী মুশফিক খন্দকার মাহিন। প্রখর স্মৃতিশক্তির এই শিশু একেবারে না দেখেই মুকিত মজুমদার বাবুর জন্য মানপত্র পাঠ করে যায় অনায়াসে।

এরপর মঞ্চে উঠে মুশফিকের হাত থেকে মানপত্রটি গ্রহণ করেন তিনি। এসময় বাংলাদেশের প্রকৃতিকে ভালোবাসা ব্যক্তিত্ব মুকিত মজুমদার বাবুর হাতে স্কুলের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীর আঁকা প্রকৃতির ছবি তুলে দেন সেবামাতা ভ্যালেরি টেইলর।

সিআরপির সেবার আঁচলে থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং উইলিয়াম এন্ড মেরি টেইলর স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমস্বরে প্রকৃতিবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান ভ্যালেরি টেইলর।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা মুকিত মজুমদার বাবুকে কী বলবো? কী বলা যায় বলতো শিশুরা? চলো আমরা ইংরেজিতে একসঙ্গে বলি: ওয়ান, টু, থ্রি… হ্যাপি বার্থডে!”

শিশুদের সঙ্গে প্রকৃতিবন্ধুর জন্মদিন উদযাপনের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মুকিত মজুমদার বাবুকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ যে তিনি তাঁর এই বিশেষ দিনের আনন্দ আমাদের এই শিশুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে এসেছেন। তিনি বরাবরই এখানকার শিশুদের সাথে জন্মদিন উদযাপন করেন, তিনি এর মাধ্যমে এই শিশুদের মুখেও হাসি ফোটান। ’

১৯৭১ সালে স্কুল ছাত্র মুকিত মজুমদার মহান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে। এরপর ব্যক্তিজীবনে কয়েকটি দেশে উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকা সত্তেও দেশপ্রেমিক মানুষটি বিদেশে স্থায়ী না হয়ে ফিরে আসেন দেশে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, মানবহিতৈষী এই ব্যক্তিত্ব মানবতার সেবা করে যাচ্ছেন এই বয়সেও। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি সিআরপির শিশুদের জন্য আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন উদারচিত্তে।

তাঁর এই মহতী উদ্যোগের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো সিআরপির স্বপ্নদ্রষ্টা ভ্যালেরি।
জীবনের বিশেষ এই দিনে নতুন প্রাণেদের ভিড়ে জন্মদিন উদযাপন করতে পারার আনন্দ প্রকাশ করেন মুকিত মজুমদার বাবু। মঞ্চে শিশুসুলভ সরল হাসিতে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শিশুদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের প্রতি আমার অনেক অনেক ভালোবাসা, আনন্দ। আজকে তোমাদের জন্যই আমাদের আনন্দ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আজকে তোমাদের মাঝে আসতে পেরেছি, পুরো একটি বছর অপেক্ষায় থাকি এই দিনে তোমাদের সাথে আনন্দ করার জন্য। এটা আমার জন্য বিশাল একটি পাওয়া। তোমরাই আমাদের দেশের ভবিষ্যত। এই যে ছোট ছোট হাতগুলো এখন বড় হচ্ছে, একসময় এই হাতগুলোই আমাদের শক্তি দেবে, বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে। তোমরাই এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

তিনি সিআরপির রেডওয়ে হলে শিশুদের সাংস্কৃতি পরিবেশনায় মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন,’আজকে তোমরা গান, নাচের যে পরিবেশনা করলে এখানে , তা সত্যিই খুবই মনোমুগ্ধকর। এধরনের পরিবেশে এত সুন্দর নাচ দেখে, গান শুনে সত্যি খুবই ভাল লেগেছে আমার। তোমাদের মধ্যে যে প্রতিভা আছে সেটার প্রমাণ আমি প্রতি জন্মদিনে এখানে এসে পাই। এই প্রতিভাগুলোকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তোমাদের সাথে আজকের এই বিশেষ দিন ভাগ করে নিতে পারা আমার জন্য বিশাল পাওয়া।”

বক্তব্য শেষে ক্ষুদে বন্ধুদের সাথে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটেন প্রকৃতিবন্ধু। এসময় তাঁর পাশে ছিলেন ভ্যালেরি টেইলর এবং ভ্যালেরির দুই মেয়ে (দত্তক) পপি এবং জয়তি।
কেক কাটা পর্ব শেষ হতেই হল ভর্তি শিশুদের মাঝে উপহার সামগ্রীর ব্যাগ নিজ হাতে বিলি করেন মুকিত মজুমদার বাবু।

এরপর সর্বশেষ চমক হিসেবে মঞ্চে গান পরিবেশ করতে আসেন প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাবের শিল্পীরা। নানা জনপ্রিয় গানে তারা শিশুদের মাতিয়ে তোলেন।

নতুন প্রাণের প্রতীক শিশুদের নাচে-গানে, মিউজিক ক্লাবের আসর জমানো কনসার্টসহ অনন্য আয়োজনে পালিত হয় মুকিত মজুমদার বাবুর ৭০ তম জন্মদিন।
নাসিমুল শুভ 




















