‘জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস আমাদের গ্রহকে সেদ্ধ করছে। আক্ষরিক অর্থেই সমুদ্র সেই তাপ নিচ্ছে,’ মন্তব্য করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সবার জন্যই যে বাড়ছে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

টোঙ্গায় প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরামের নেতাদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। টোঙ্গার রাজধানী নুকুয়ালোফাতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের আঞ্চলিক নেতাদের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনে বক্তৃতা দেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকলে আমাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার মত কোন লাইফবোট নেই।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, ‘পুরো বিষয়টি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট একটি সংকট হচ্ছে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি। এর পরিণতি খুব দ্রুতই অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এর কারণটাও খুব সাধারণ। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিপুল পরিমাণে উৎপন্ন গ্রিন হাউজ গ্যাস বিশ্বকে মারাত্মক উত্তপ্ত করে তুলছে। আর সাগরের পানির উচ্চতাও তাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রিনহাইজ নিঃসরণ নাটকীয়ভাবে হ্রাস না পেলে এই শতাব্দীর মাঝ নাগাদ প্রশান্ত মহাসাগরের উচ্চতা ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে উপকূলের অনেক স্থানে বছরে অন্তত ৩০দিন বন্যায় প্লাবিত হবার আশঙ্কা সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সমুদ্র রক্ষা পেলে বেঁচে যাব আমরা। তাই সময় ফুরানোর আগেই সতর্কতায় সাড়া দিয়ে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

সোমবার জাতিসংঘের দু’টি প্রতিষ্ঠান সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা ও ক্লাইমেট অ্যাকশন টিমের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ৩০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বেড়েছে ৯.৪ সেন্টিমিটার (৩.৭ ইঞ্চি), কিন্তু ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই সংখ্যা ১৫ সেন্টিমিটার।

এর ভিত্তিতে গুতেরেস বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদন প্রমাণ করে, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে বৃদ্ধির মাত্রা বেশি, কোন স্থানে তা প্রায় দ্বিগুণ।’

জলবায়ু পরিবর্তনে ভুগতে থাকা সমুদ্রপাড়ের কম উন্নত দেশগুলোর চেয়ে ধনীদের দায় আবারও সামনে আনলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ছোট দ্বীপগুলো ভূমিকা রাখে না, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যা কিছু ঘটে, তা এখানে দেখা যাচ্ছে বহুগুণ বেশি।’

এই বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে রক্ষায় তহবিল গঠনে জি২০ সদস্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান বরাবরই জানিয়ে আসছেন গুতেরেস। এবারও তিনি বলেছেন, ‘সমুদ্রের স্ফিতীর সঙ্গে আমাদের তহবিলেরও বৃদ্ধি দরকার।’

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকি নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজন করতে চলেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।