বিশ্বের পর্যটকদের বড় একটি অংশের পছন্দের ডেস্টিনেশন সমুদ্র। সমুদ্রসৈকতে বসে-শুয়ে গায়ে সানস্ক্রিন মেখে রোদ পোহানো, আহা কতজনের শখ। শীতপ্রধান দেশগুলোর শ্বেতাঙ্গ মানুষদের কাছে সৈকতে রোদপোহানোর ব্যাপারটাই আলাদা আমেজের, চামড়া হাল্কা ট্যান করতে উৎসুক অনেকেই। তাদের সমুদ্রবিলাসের নিত্যসঙ্গী সানস্ক্রিন কিন্তু প্রকৃতির জন্য বিপদে ডেকে আনছে। বিশেষ করে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক রাসায়নিক হিসেবে হাজির হয়েছে মানুষের প্রসাধনী সানস্ক্রিন। পর্যালোচনামূলক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য, যা তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।
মূল পর্যালোচনাটি প্রকাশিত হয়েছে মেরিন পলিউশন বুলেটিনে, যার শিরোনাম “সামুদ্রিক জীবের উপর জৈব এবং অজৈব ইউভি ফিল্টার প্রাপ্ত সানস্ক্রিনের ইকোটক্সিকোলজিকাল প্রভাব: একটি সুক্ষ্ম পর্যালোচনা।”

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সানস্ক্রিনে রাসায়নিক যৌগ থাকে, যা এক প্রকার ক্রমাগত দূষণকারী হিসাবে পরিচিত, এই উপকরণই সূর্যের অতিবেগুনী (UV) রশ্মিকে অবরুদ্ধ করে। আর এটিই আবার প্রবালের ব্লিচিং এবং বিকৃতি ও মাছের প্রজনন সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে সূর্যের তাপ যেমন প্রখর হচ্ছে তেমনি সানস্ক্রিনের বাজারও বাড়ছে। ২০২৮ সাল নাগাদ সানস্ক্রিনের বাজার প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলবে।
পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, সানস্ক্রিন ধুয়ে উচ্চ পরিমাণে বিশ্বের মহাসাগরে মিশছে। দেখা যাচ্ছে, প্রতি একজন পর্যটক গায়ে যে পরিমাণে সানস্ক্রিন মাখেন তার ৫০ শতাংশ একবার সমুদ্রে নামলে পানিতে মিশে যাচ্ছে। এভাবে যদি একটি সৈকতে ১ হাজার জন্য পর্যটক সমুদ্রে নামে তাহলে ৩৫ কেজি সানস্ক্রিন পানিতে মিশছে!
এই পর্যালোচনায় সানস্ক্রিন, ইউভি ফিল্টার এবং তাদের পরিবেশগত এবং ইকোটক্সিকোলজিক্যাল প্রভাবের সাথে যুক্ত ১১০টিরও বেশি প্রকাশনা খতিয়ে দেখা হয়। এসব থেকে জানা গেছে, আনুমানিক ৬ হাজার থেকে ১৪ হাজার টন UV ফিল্টার প্রতি বছর শুধুমাত্র প্রবাল প্রাচীর অঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হয়!
এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা সামুদ্রিক জীবনের উপর সানস্ক্রিন দূষণের প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং প্লাইমাউথ মেরিন ল্যাবরেটরি এবং প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক অ্যানেলিজ হজ বলেন, ‘এই রাসায়নিকগুলি কীভাবে সামুদ্রিক জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে তা বোঝার উপর বর্তমান গবেষণাটি কেবলমাত্র অল্প একটু চেষ্টামাত্র।
তিনি আরও বলেন, যা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, তা হলো যে এই যৌগগুলি সামুদ্রিক পরিবেশে ক্রমাগতই মিশে চলেছে। এ কারণে সানস্ক্রিন বলতে গেলে ‘স্থায়ী দূষণকারী’ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আমাদের সত্যিই বুঝতে হবে কিভাবে এই রাসায়নিকগুলি সামুদ্রিক পরিবেশে মিথস্ক্রিয়া করে এবং আসলে সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে জমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা।’