ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জি-৭ সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেয়ার জল্পনা এখন তুঙ্গে। এর মধ্যেই ট্রাম্প তেহরান খালি করতে বলেছেন এবং সর্বশেষ তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হুমকি দিয়েছেন। চলমান সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের জানা আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনই তাঁকে হত্যা করতে যাচ্ছে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্টন ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমাদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। এখনই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করুন।’
এই হুমকি-ধমকি দিয়ে ট্রাম্প করেছেন জরুরি বৈঠক। হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন কক্ষে এ বৈঠক করেছেন। এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের এ বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল―মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে কিনা দেশটি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য। এদিন বৈঠকে ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যে মতামতের পরিপূর্ণ মিল হয়নি বলেও জানা গেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতিও খবরে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র গত তিন-চারদিনে আমেরিকার বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে অন্তত ৩০টি সামরিক জেট ইউরোপে সরিয়ে এনেছে। এগুলোর গতিপথের ওপর নজর রাখা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনার পর বিবিসি ভেরিফাই এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।
ট্যাংকার বিমানগুলোর স্থানান্তর ‘একেবারেই স্বাভাবিক নয়’ তা বলছেন এক বিশেষজ্ঞ। থিংকট্যাঙ্ক রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন, আসছে সপ্তাহগুলোতে ওই অঞ্চলে ‘তীব্র সামরিক অভিযানে সহায়তার লক্ষ্যে’ পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিমানগুলো মোতায়েন করা হয়েছে বলে ‘জোরাল আভাস’ পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া ইরানের ভরসা পাকিস্তানকেও কাছে টানতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে আজ পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও ট্রাম্পের সঙ্গে আসিম মুনিরের এই সাক্ষাৎ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
খামেনির যুদ্ধ ঘোষণা
এদিকে ট্রাম্পের হুমকির পর সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বুধবার (১৮ জুন) ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া বার্তায় তিনি বলেছেন ‘যুদ্ধ শুরু হলো।’
ইরান ইন্টারন্যাশনাল নিউজ আউটলেটের অনুবাদ অনুসারে, পোস্টটিতে বলা হয়েছে ‘মহান হায়দারের নামে, শুরু হলো যুদ্ধ।’ হায়দার নামটি প্রায়শই আলীর (রা.) জন্য ব্যবহৃত হয়, যাকে শিয়া মুসলমানরা প্রথম ইমাম এবং নবী মুহাম্মদের (সা.) উত্তরসূরি বলে মনে করেন।
পোস্টটিতে একটি ছবি রয়েছে যেখানে একজন ব্যক্তি তরবারি হাতে দুর্গের মতো একটি গেটে প্রবেশ করছেন, যার উপরে আকাশে আগুনের রেখা রয়েছে।
আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। ইরান কখনোই জায়নবাদীদের (ইসরায়েল) সঙ্গে আপস করবে না।’