নদ-নদীতে দেশীয় মাছের বিনাশকারী এক আতঙ্কের নাম সাকার ফিশ।সাকার মাছ প্রথম বাংলাদেশে আনা হয় ১৯৮০-এর দশকে, মূলত অ্যাকুরিয়ামে পালনের জন্য বাহারি মাছ হিসেবে। প্রথমে কিছু অ্যাকুরিয়াম থেকে এটি গুলশান লেকের মতো জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে তা দেশের বিভিন্ন নদী, পুকুর ও জলাশয়ে বিস্তৃত হয়। সাকার মাছ স্থানীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও পোনা খেয়ে ফেলে, যার ফলে এটি দেশীয় মাছের সংখ্যা হ্রাসে ভূমিকা রাখে এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এবার সাকার ফিশের মতোই শখের বশে আনা আরেক বিদেশী জলজপ্রাণী বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, অ্যাকুরিয়াম ফিস আমদানির আড়ালে দেশে অবৈধভাবে আসছে বিদেশি আগ্রাসী কচ্ছপ। আকর্ষণীয় করতে এর পিঠে সেঁটে দেওয়া হয় রঙিন স্টিকার। চীন,থাইল্যান্ড থেকে আসা মাংসাশী এসব কচ্ছপ প্রদর্শিত হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন ইনডোর পার্কে। সেখানে শিশুদের কাছে বিক্রিও হচ্ছে।
প্রাণী গবেষক ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বলছে, সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এ কচ্ছপ জলজপ্রাণীর জন্য চরম হুমকি হতে পারে।
রেড ইয়ার্ড স্লাইডার কচ্ছপের ছানা এসেছে চীন থেকে। বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বলছে, থাইল্যান্ড ও চীনের এ প্রজাতি অবৈধভাবে আমদানী করছে একটি চক্র।

কচ্ছপ আকর্ষণীয় করতে পিঠে সেঁটে দেওয়া হয় বাহারিসব স্টিকার। রাজধানীর নানা ইন্ডোর গেম জোনের অ্যাক্যুরিয়ামে প্রদর্শন করা হচ্ছে এসব কচ্ছপ। আকর্ষণীয় এসব কচ্ছপ শিশুদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, রেড ইয়ার্ড স্লাইডার নেটিভ কচ্ছপের ক্ষতি করছে। এগুলোর এনওসি বন বিভাগ দেয় না। এই প্রাণিগুলো দেশে ঢুকেছে অবৈধভাবে।
রেড ইয়ার্ড স্লাইডার হলো একটি উভচর কচ্ছপ। তবে বেশ আগ্রাসী ও মাংসাশী। খালে-বিলে থাকলে মাছ ও অন্য জলজ প্রাণ খেয়ে শেষ করে। বন্যপ্রাণী গবেষকরা বলছেন, শিশুদের মাধ্যমে এ কচ্ছপ ছড়িয়ে পড়ছে। যা জলজ পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ জামান বলেন, আমাদের দেশীয় প্রজাতির অবস্থানগুলো এরা দখল করে ফেলবে। যদি পুকুরেও লালন–পালন করি, বন্যায় পুকুর ডুবলে এগুলো ছড়িয়ে পড়বে। এদের জন্মদান ক্ষমতা ও ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অনেক বেশি। এতে আমাদের দেশীয় প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
গবেষকরা আরও বলছেন, এ প্রজাতির কচ্ছপ আমদানি বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে বাসাবাড়িতে এর পোষা বন্ধে আইন করা জরুরি।
প্রকৃতিবার্তা ডেস্ক 



















