সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে মহাবিপন্ন ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির তিনটি কচ্ছপের ডিম ফুটে জন্ম নিয়েছে ৬৫টি বাচ্চা।
সোমবার (৫ মে) সকালে ফুটে বের হওয়ার পর বাচ্চাগুলোকে তুলে কেন্দ্রের কচ্ছপ লালন-পালন কেন্দ্রের সংরক্ষণ প্যানে রাখা হয়েছে।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, গত ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনটি কচ্ছপ ৮২টি ডিম দেয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বালুর মধ্যে রাখা হয়। নিবিড় পরিচর্যার পর সোমবার সকালে কেন্দ্রের পুকুরপাড়ের স্যান্ডবিচে রাখা বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম থেকে ফুটে বের হতে শুরু করে বাচ্চা।
এসব বাচ্চাদের প্যানে রেখে লালন-পালনের পর ছাড়া হবে বড় পুকুরে। এ পর্যন্ত সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে ৫২১টি ডিম থেকে ৪৭৫টি বাচ্চা ফোটাতে তারা সক্ষম হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
হাওলাদার আজাদ কবির আরও বলেন, পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। একসময় এ অঞ্চলে প্রায় ২৬ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যেত। এর মধ্যে বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ আর দেখা যাচ্ছিল না।
২০০০ সাল থেকে গবেষকেরা ধারণা করেছিলেন, পৃথিবীতে আর বাটাগুর বাসকার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ২০০৮ সালে গবেষকেরা প্রকৃতিতে বাটাগুর বাসকা আছে কি না, তা খুঁজতে শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে আটটি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। যার মধ্যে চারটি পুরুষ ও চারটি স্ত্রী।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র থেকে জানা যায়, নতুন করে আবারও প্রকৃতিতে ওই প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়ার পর প্রজননের জন্য গাজীপুরের ভাওয়াল গড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সেগুলোকে নিবিড়ভাবে লালন-পালন ও প্রজননের চেষ্টা করেন। সেখানে ভালো সাড়া না পাওয়ায় ২০১৪ সালে মূল আটটি বাটাগুর বাসকা, তাদের জন্ম দেওয়া ৯৪টি বাচ্চাসহ করমজল প্রজননকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।
প্রকৃতি সংরক্ষণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন আইইউসিএনের মহাবিপন্নের তালিকায় থাকা বাটাগুর বাসকা সংরক্ষণ ও মুক্ত প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনতে ২০১২ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে, বন বিভাগ, অস্ট্রিয়ার জু ভিয়েনা এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।
২০১৭ সাল থেকে করমজলে বাটাগুর বাসকা ডিম দিতে শুরু করে। বর্তমানে সুন্দরবনের করমজলকেন্দ্রটিতে ছোট–বড় মিলিয়ে ৩৮৭টি কচ্ছপ রয়েছে।
২০২৫ অর্থাৎ এবছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাটাগুর বাসকা সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় বন বিভাগের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি কাগজে-কলমে ফের নবায়ন করে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।