সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষার বার্তা দিলেন পরিবেশ সচিব Logo নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে এবছরের ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ শুরু  Logo গাজীপুরে কৃষি প্রযুক্তি ও পুষ্টি মেলার উদ্বোধন Logo দাবি না মানলে জবি শিক্ষার্থীদের লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা Logo সাম্য হত্যার ঘটনায় শোক পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন Logo অ্যান্টার্কটিকায় জলবায়ু পরিবর্তন স্পষ্ট, পূর্ব দিকের চেয়ে পশ্চিমে দ্রুত গলছে বরফ Logo প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন হলে সে উন্নয়ন টেকসই হবেনা: রিজওয়ানা হাসান Logo ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রি দিলো চবি Logo চিরতরে চলে গেলেন ‘সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’   Logo চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড: প্রধান উপদেষ্টা

স্থানীয়দের আগুনে পুড়ছে টাঙ্গাইল-গাজীপুরের শাল-গজারি বন

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনাঞ্চলে স্থানীয়দের দেওয়া আগুনে পুড়ছে গাছপালা ও লতা-গুল্ম। বন ধ্বংসের এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ প্রকল্পও। গত কয়েক সপ্তাহে সখীপুরের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

স্থানীয় বন বিভাগ মাইকিং করেও বনে অগ্নিসংযোগ থামাতে পারছে না।

সরকারের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় সখীপুরের ৭২০ হেক্টর বনভূমিতে আমলকী, লটকন, হরীতকী, নিম, বহেড়া, গর্জন, চিকরাশি, গাদিলা, পিতরাজ, সোনালু, জলপাই, মহুয়া, কাঠবাদাম, গামার, শিমুল, ছাতিয়া, বেল, তেঁতুল, অর্জুনসহ ফলদ ও ঔষধি গাছের ৪২ প্রজাতির ১০ লাখ ৮০ হাজার চারা রোপণ করেছিল বন বিভাগ। তবে যেসব বনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, ওই অংশে প্রকল্পের চারা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

এতে একদিকে বনের ভেতর বানর, বেজি, বাগডাশ, বন বিড়াল, কাঠবিড়ালি, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী; চিল, শালিক, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং গুইসাপ, শঙ্খচূড় বা রাজগোখরাসহ বিভিন্ন প্রজাতীর সরীসৃপ মারা পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিরাপদ বাসস্থান। বানরগুলো মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসছে।

সম্প্রতি সখীপুর বন বিভাগের দেওবাড়ি, কালমেঘা, বাজাইল বিট কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা, তক্তারচালা, নলুয়া, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান ও মরিচা এলাকার কয়েকটি সংরক্ষিত বন ঘুরে আগুন দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার হতেয়া, বহেড়াতৈল ও বাঁশতৈল (অংশ) রেঞ্জের ১১টি বিটের অধীনে সখীপুরে ২৮ হাজার ৫৯৪.৫২ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২,২০০ একর জমিতে শাল গজারির সংরক্ষিত বন। বন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ১,৭৮০ একর বনভূমিতে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ফলদ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাতাঝরার মৌসুম এলেই স্থানীয়রা বনে আগুন দেয়। ছোট গাছগুলো পুড়ে যাওয়ার পর তা সংগ্রহ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করাই আগুন দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য।

দেওবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, “চৈত্র-বৈশাখ মাসে যখন গজারি গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে, তখন ঝোপঝাড় পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী পাতায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বনের ভেতরে থাকা সব লতাপাতা পুড়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রতিবছর বনে এভাবে আগুন দেওয়া হয়।”

এ বিষয়ে হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, “বনে আগুন দেওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। হুমকির মুখে পড়ে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আগুন দিয়ে লাকড়ি তৈরির চিরায়ত অভ্যাস বাদ দিতে হবে।”

এ ব্যাপারে বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা ইমরান হাসান বলেন, “শুকনা মৌসুমে বনে আগুন দেওয়া একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে এ বছর সুফল পেতে বাগানের ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রক্ষায় বিভিন্ন এলাকায় পাহারাদারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষার বার্তা দিলেন পরিবেশ সচিব

স্থানীয়দের আগুনে পুড়ছে টাঙ্গাইল-গাজীপুরের শাল-গজারি বন

আপডেট সময় ০১:২২:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনাঞ্চলে স্থানীয়দের দেওয়া আগুনে পুড়ছে গাছপালা ও লতা-গুল্ম। বন ধ্বংসের এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ প্রকল্পও। গত কয়েক সপ্তাহে সখীপুরের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

স্থানীয় বন বিভাগ মাইকিং করেও বনে অগ্নিসংযোগ থামাতে পারছে না।

সরকারের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় সখীপুরের ৭২০ হেক্টর বনভূমিতে আমলকী, লটকন, হরীতকী, নিম, বহেড়া, গর্জন, চিকরাশি, গাদিলা, পিতরাজ, সোনালু, জলপাই, মহুয়া, কাঠবাদাম, গামার, শিমুল, ছাতিয়া, বেল, তেঁতুল, অর্জুনসহ ফলদ ও ঔষধি গাছের ৪২ প্রজাতির ১০ লাখ ৮০ হাজার চারা রোপণ করেছিল বন বিভাগ। তবে যেসব বনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, ওই অংশে প্রকল্পের চারা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

এতে একদিকে বনের ভেতর বানর, বেজি, বাগডাশ, বন বিড়াল, কাঠবিড়ালি, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী; চিল, শালিক, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং গুইসাপ, শঙ্খচূড় বা রাজগোখরাসহ বিভিন্ন প্রজাতীর সরীসৃপ মারা পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিরাপদ বাসস্থান। বানরগুলো মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসছে।

সম্প্রতি সখীপুর বন বিভাগের দেওবাড়ি, কালমেঘা, বাজাইল বিট কার্যালয় সংলগ্ন এলাকা, তক্তারচালা, নলুয়া, বহেড়াতৈল, কাকড়াজান ও মরিচা এলাকার কয়েকটি সংরক্ষিত বন ঘুরে আগুন দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার হতেয়া, বহেড়াতৈল ও বাঁশতৈল (অংশ) রেঞ্জের ১১টি বিটের অধীনে সখীপুরে ২৮ হাজার ৫৯৪.৫২ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২,২০০ একর জমিতে শাল গজারির সংরক্ষিত বন। বন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ১,৭৮০ একর বনভূমিতে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ফলদ এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাতাঝরার মৌসুম এলেই স্থানীয়রা বনে আগুন দেয়। ছোট গাছগুলো পুড়ে যাওয়ার পর তা সংগ্রহ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করাই আগুন দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য।

দেওবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, “চৈত্র-বৈশাখ মাসে যখন গজারি গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে, তখন ঝোপঝাড় পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী পাতায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বনের ভেতরে থাকা সব লতাপাতা পুড়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রতিবছর বনে এভাবে আগুন দেওয়া হয়।”

এ বিষয়ে হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, “বনে আগুন দেওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। হুমকির মুখে পড়ে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আগুন দিয়ে লাকড়ি তৈরির চিরায়ত অভ্যাস বাদ দিতে হবে।”

এ ব্যাপারে বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা ইমরান হাসান বলেন, “শুকনা মৌসুমে বনে আগুন দেওয়া একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে এ বছর সুফল পেতে বাগানের ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা রক্ষায় বিভিন্ন এলাকায় পাহারাদারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”