দেশের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গনে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে ন্যাশনাল নেচার সামিট-২০২৫। এটি সম্মেলনের ১৫ তম আসর। দু’দিনের এই সম্মেলন চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় নবীনদের মাঝে আগ্রহ জাগাতে এবং দূষণ রোধে সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে এই সম্মেলন আয়োজন করে আসছে নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাব।
আজ সকালে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকৃতি সংরক্ষণে সচেতনতা গড়ে চলা প্রকৃতিবন্ধু ও সাবেক নটরডেমিয়ান মুকিত মজুমদার বাবুকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছে নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাব। এছাড়াও এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মডারেটর মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এবং কলেজ অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিওকেও জানানো হয়েছে আজীবন সম্মাননা। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম যথেষ্ট প্রকৃতিবান্ধব। পরিবেশ রক্ষায় তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতির এমন উপাদানগুলো নষ্ট করা যাবে না যা তৈরি করা সম্ভব নয়।’
পরিবেশ ধ্বংসের বিরূপ পরিণতির উদাহরণ দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসের (দাবানল) অবস্থা দেখে আমাদেরও শিক্ষা নেয়া উচিত।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নটর ডেম কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশে প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে সম্প্রচারমাধ্যমে কাজ করা ব্যক্তিত্ব মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাব ৪০ বছর অতিক্রম করেছে। অনেক আগে থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি নানা বিষয়ে, বিশেষ করে পরিবেশ নিয়ে যখন কেউ ভাবেনি তখন নটর ডেম কলেজ পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করেছে। আমি গর্বিত যে আমি এই কলেজেরই শিক্ষার্থী ছিলাম।’
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘প্রকৃতি-পরিবেশ ভাল না থাকলে, আমরাও যে ভাল থাকবো না তা নানাভাবে আমরা এখন বুঝতে পারছি। অথচ আমাদেরই কারণে দিন দিন প্রকৃতি রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস এই সম্মেলনে আজকে আমরা যারা এসেছি তারা প্রকৃতিকে ভালোবাসি বলেই এসেছি। এই বিশ্বাস থেকেই বলবো সবাই মিলে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় আমরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করলেই নতুন প্রজন্মের জন্য ভাল পরিবেশ রেখে যেতে পারবো।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে নটর ডেম নেচার স্টাডি ক্লাবের মডারেটর সহকারী অধ্যাপক বিপ্লব কুমার দেব জানান, এবারের সম্মেলনে স্কুল-কলেজ মিলিয়ে দেশের ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
সম্মেলনের ফাঁকে হচ্ছে নানা প্রতিযোগিতা। একক ইভেন্টে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নেচার ফটোগ্রাফি, সবুজ সাংবাদিকতা, জলবায়ুবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, গ্রিন ম্যারাথনসহ আরও অনেক কিছু। এ ছাড়া দলগত ইভেন্টে প্রতিযোগীরা দেয়ালিকা প্রদর্শনী, প্রজেক্ট ডিসপ্লে ও রিসার্চ ওয়ার্ক প্রেজেন্টেশনে অংশগ্রহণ করছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গন।
সভামঞ্চের দুই পাশে প্রদর্শিত হচ্ছে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপদের বার্তা দেয়া নানা রকম দেয়ালিকা। উদ্বোধনী পর্বের পর শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজগুলো ঘুরে দেখেন পরিবেশ উপদেষ্টাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সম্মেলন কেন্দ্রে ছিল প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের স্টলসহ আরও কয়েকটি স্টল। স্টলগুলোতে নানা ইউনিফর্মে আসা কৌতুহলী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্কুলগামী ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃতি ও প্রতিবেশবিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পুতুলনাচের আয়োজন নিয়ে আছে সিসিমপুর।
১৩ ও ১৪ তম আসরের মতো এবারের সামিট আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্প’। সহ-আয়োজক হিসেবে আছে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে লাল-সবুজের চ্যানেল আই।