টেকনাফ, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা জনপদ। অথচ পত্র-পত্রিকায় টেকনাফ নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক খবর আসে। তবে এবার নারী দিবসে সেই টেকনাফেরই একদল প্রকৃতিসখী নারীর গল্প উঠে এলো পত্র-পত্রিকায়। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানা গেলো, একদল সাহসী নারী প্রতিদিনই টেকনাফের দুর্গম বনাঞ্চলে পাহারা দেন। সবুজ পোশাক পরা ২৮ জন নারীর হাতে থাকে লাঠি ও ছাতা। নিরলসভাবে বন রক্ষা করে চলেছেন তারা। কেউ গাছ কাটতে চাইলে তারা বাধা দেন, আগুন লাগানোর চেষ্টা করলেও প্রতিরোধ করেন। গত ১৯ বছর ধরে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা, ফলে রক্ষা পেয়েছে হাজারো গাছপালা।
২০০৬ সালে বন বিভাগ ও ইউএসএআইডির সহায়তায় ‘নিসর্গ নেটওয়ার্ক’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠন গঠিত হয়। এর ব্যবস্থাপনায় কেরুনতলী গ্রামের বাসিন্দা খুরশিদা বেগমের নেতৃত্বে গঠিত হয় ২৮ সদস্যের ‘বন পাহারা দল’।
টেকনাফ রেঞ্জের আওতাধীন বনাঞ্চল রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে এই দলটি। টেকনাফের বনাঞ্চল বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ—অস্ত্রধারী ডাকাত, মাদক কারবারি, অপহরণের আশঙ্কা, বন্য প্রাণীর ভয়—সবই আছে। কিন্তু এসব বাধা পেরিয়ে এই নারীরা দিনের পর দিন প্রকৃতির সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।

তাঁদের সাহস ও অবদানের কথা এখন জানছে দেশ। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই নারী দল পাহারায় ব্যস্ত। শাল, সেগুন, গর্জনসহ নানা প্রজাতির গাছগাছালিতে ঘেরা পাহাড়ি অরণ্যে তাঁরা সতর্ক দৃষ্টিতে ঘুরে বেড়ান।
দলটির নেতৃত্বে আছেন খুরশিদা বেগম (৪৬), যিনি কেরনতলী নারী বন পাহারা দলের সভাপতি। বনকে ভালোবাসার স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই নারী। পেয়েছেন ‘ওয়াংগারি মাথাই’ পুরস্কার। ইতালির রাজধানীর রোমে গিয়ে সেই পুরস্কার হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তখন বয়স ছিল মাত্র ২৭।
নারীদের দলটি প্রতিদিন সকাল ৯টায় বনাঞ্চলে প্রবেশ করে। প্রথমে নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করেন, তারপর চারজন করে সাতটি দলে বিভক্ত হয়ে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কাজ মূলত গাছ কাটা, অগ্নিসংযোগ বা বন ধ্বংসের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা। দুপুরের খাবারও তাঁরা বনের ভেতরেই খান এবং বিকেল চারটায় বাড়ি ফিরে যান।
টেকনাফের এই ২৮ নারীর অবিরাম প্রচেষ্টায় বন আজও টিকে আছে, সবুজের সমারোহ ধরে রেখেছে। তাঁদের এই নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা প্রকৃতি সংরক্ষণে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।