আপাতত সৌরজগতের একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ অর্থাৎ আমাদের পৃথিবীর একেবারে ভেতরের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। কোনো গালগল্প নয়, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, পৃথিবীর কেন্দ্রের আকৃতি বদলে যাওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করেছেন।
গত ২০ বছরে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের (ইনার কোর) আকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ একেবারে মধ্যভাগের স্তরটি গরম, কঠিন ধাতব বলের মতো। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে তরল ধাতবের বহিঃস্তর। গ্রহ বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে অনুমান করছিলেন, সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীর ভেতরের কঠিন কেন্দ্রভাগ বিকৃত হয়েছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো তারা প্রমাণ পেয়েছেন, গত ২০ বছরে ভূ–কেন্দ্রের আকৃতিতে বিকৃতি ঘটেছে। ভূমিকম্পের তরঙ্গে ধরা পড়েছে এ বিকৃতির চিহ্ন।
সাধারণত এটি গোলাকৃতির বলে মনে করা হলেও নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু স্থানে এর প্রান্ত ১০০ মিটার বা তার বেশি বিকৃত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন ভিদালে নেতৃত্বাধীন গবেষণায় উঠে এসেছে, কঠিন ইনার কোর এবং তরল ধাতব বাইরের কোরের সংযোগস্থলে এই পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি নেচার জিওসায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

পৃথিবীর কেন্দ্র মূলত দুটি অংশে বিভক্ত—তরল বাইরের কোর ও কঠিন অভ্যন্তরীণ কোর। ইনার কোরের গতিশীলতা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। যদি এটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে পৃথিবীও মঙ্গলগ্রহের মতো প্রাণহীন হয়ে পড়তে পারে।
অভ্যন্তরীণ কোর স্বতন্ত্রভাবে ঘুরতে থাকে, যা বাইরের কোর ও পুরো গ্রহের গতির সঙ্গে সবসময় মিল থাকে না। তবে গবেষকরা দেখেছেন, ২০১০ সালের দিকে এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের তুলনায় ধীরগতিতে চলতে শুরু করেছিল, পরে আবার গতি বাড়ায়।
বিজ্ঞানীরা সরাসরি পৃথিবীর কোরে পৌঁছাতে পারেননি, কারণ এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার মাইল গভীরে অবস্থিত। তাই ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট শকওয়েভ বিশ্লেষণ করেই কোরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে একই জায়গায় সংঘটিত ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ইনার কোরের পরিবর্তনের প্রমাণ পেয়েছেন। অধ্যাপক ভিদালের মতে, বাইরের কোরের তরল প্রবাহ ও অসমান মাধ্যাকর্ষণ টানের ফলে ইনার কোর বিকৃত হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হার্ভোজ টকালসিক, যিনি গবেষণায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, একে ‘গুরুত্বপূর্ণ ধারণা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, গবেষণাটি কোরের সান্দ্রতা (ভিস্কোসিটি) সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারে, যা এখনো বিজ্ঞানের অন্যতম রহস্য।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ও দূরবর্তী হলো এর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র। লোহা ও নিকেলের তৈরি এই কঠিন গোলকটির আকার চাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশ, এবং এর ব্যাসার্ধ প্রায় ১,২২১ কিলোমিটার! এই অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রে তাপমাত্রা প্রায় ৫,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে!
প্রকৃতিবার্তা ডেস্ক 



















