আপনি যদি ছাদে বাগান করার স্বপ্ন দেখেন, তাহলে সঠিক মাটি তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। ছাদ বাগানের টবের জন্য শুধু মাটি হলেই হবে না, দরকার গাছের উপযোগি ও সঠিক মাটি। কারণ, গাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি সরাসরি মাটির উপর নির্ভর করে। আসুন ছাদবাগানের মাটি তৈরির বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিভিন্ন ধরনের মাটি ও তাদের উপযোগিতা:
বেলে-দোঁআশ মাটি: বেলে-দোঁআশ ছাদে বাগান করার সবচেয়ে উপযোগি মাটি। এই মাটিতে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে এবং বাতাসও ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। তবে এই মাটি ছাদ বাগানের উপযোগি করার জন্য মাটির সাথে গোবর সার, পাতা পচা সার, কাঠ পোড়ানো ছাই, সরিষার খৈল, টিএসপি, পটাশ, পাথর চুন ইত্যাদি মেশাতে হবে।
এঁটেল মাটি: এটেল মাটি খুব শক্ত হয়। এছাড়া ছাদে বাগানের উপযোগি করতে এঁটেল মাটির সাথে কোকোপিট বা বালি মাটি মেশাতে হবে।
বালি মাটি: এই মাটি খুবই হালকা। তাতে এঁটেল মাটি মিশিয়ে দো-আঁশ মাটিতে রূপান্তর করতে হবে। (মাটি ঝুর ঝুরে হলেই বুঝবেন তা দো-আঁশ মাটি)।

মাটিতে কী কী মেশাতে হবে?
- জৈব সারঃ গাছের বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য সব ধরনের মাটিতে প্রচুর পরিমাণে (চারভাগের একভাগ) জৈব সার মেশাতে হবে। টবের জন্য ট্রাইকো কম্পোস্ট সবচেয়ে উপযোগি জৈব সার। এছাড়া গোবর সার, পাতা পচা সার, কাঠ পোড়ানো ছাই, সরিষার খৈল, বাড়িতে তৈরি আবর্জনাও জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
- জৈব স্যার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের পরিমাণ– ৩ বস্তা মাটির সাথে ১ বস্তা গোবর সার ও পাতা পচা সার (যদি থাকে) অর্ধেক বস্তা, ১ কেজি কাঠ পোড়ানো ছাই (যদি থাকে), সরিষার খৈল ৩০০ গ্রাম, তার সাথে ২০০ গ্রাম খাঁটি নিম খোল, হাড়ের গুঁড়ো ২০০ গ্রাম এবং ৫০ গ্রাম পাথর চুন।
- খনিজ সার: টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ ইত্যাদি খনিজ সার গাছের বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদান যোগ করে। তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- অন্যান্য উপাদান: কাঠ পোড়ানো ছাই, সরিষার খৈল, পাথর চুন ইত্যাদি মাটির গঠন ও পিএইচ মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

মাটি তৈরির পদ্ধতি:
- মাটি সংগ্রহ: আপনি বাজার থেকে বা নিজের বাগান থেকে ভালো মানের মাটি সংগ্রহ করতে পারেন।
- মাটি মিশ্রণ: বিভিন্ন ধরনের মাটি, জৈব সার ও অন্যান্য উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে একটি সমন্বিত মিশ্রণ তৈরি করুন।
- মাটি শোধন: মাটি তৈরির সময়ই মাটি শোধন করে নেওয়া উত্তম। মাটিতে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক মিশিয়ে মাটি শোধন করুন। এতে নানা ধরনের রোগবালাই থেকে গাছকে রক্ষা করা যায়। টবের মাটির সাথে ১০ গ্রাম (১.০-১.৫ চা চামচ) হারে দানাদার কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক মিশিয়ে মাটি শোধন করে নিতে পারেন। এছাড়া জৈব কীটনাশক বায়োডার্মাসলিড ব্যবহার করতে পারেন; সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ভার্মিকম্পোস্টের সঙ্গে ১-২ গ্রাম হারে বায়োডার্মা মিশিয়ে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে।
 চাল ধোয়া পানির ব্যবহার:
চাল ধোয়া পানির ব্যবহার:
আমরা প্রত্যেকেই বাড়িতে প্রতিদিন ভাত রান্নার আগে ভালোভাবে চাল ধুয়ে নেই। এতে চালের মধ্যে থাকা চালের ময়লা বেরিয়ে যায় এবং ভাত পরিষ্কার হয়। প্রত্যেক বাড়িতেই চাল ধোয়া হয়ে গেলে সেই পানি ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু চাল ধোয়া পানিতে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান থাকে। এটি গাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চাল ধোয়া পানি সপ্তাহে একবার বা দুবার গাছের গোড়ায় দিতে পারেন।
টবের মাটিতে চাল ধোয়া পানি ব্যবহারের উপকারিতা।
- চাল ধোয়া পানিতে থাকে গাছের উপকারী বিভিন্ন উপাদান। যেমন ফসফরাস ও পটাশিয়াম।
- চাল ধোয়া পানিতে রয়েছে গাছের অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান ক্যালসিয়াম।
- এছাড়াও রয়েছে লোহা , জিংক, অ্যামাইনো অ্যাসিড,ও ফাইবার।
- গাছের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নাইট্রোজেন। তবে তবে চাল ধোয়া পানিতে নাইট্রোজেন না থাকলেও থাকে স্টার্চ যা গাছকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। গাছে ফুল-ফল আসতেও সাহায্য করে এই স্টার্চ।
- স্টার্চ গাছের মাটিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে তোলে। এই সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক মাটিতে থাকা যে সমস্ত উপাদান গাছ সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না সেই সমস্ত উপাদানগুলিকে এমনভাবে ভেঙে ফেলে যাতে গাছ খুব সহজেই সেই সমস্ত উপাদান গুলিকে গ্রহণ করতে পারে।
দেখে নেওয়া যাক গাছে এই চাল ধোয়া পানির প্রয়োগের পদ্ধতি :
- অনেকেই চাল দু-তিন বার ধুয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে প্রথমবারের চাল ধোওয়া পানি গাছে প্রয়োগ করতে হবে। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চির টবে প্রায় ২০০ গ্রাম চাল ধোওয়া পানি প্রয়োগ করতে হবে। টব যদি ১২-১৩ ইঞ্চির হয় তবে ৩০০ গ্রাম পানি দেওয়া যেতে পারে।
- টানা এক থেকে দুমাস একটি গাছের গোড়ায় এই চাল ধোয়া পানি সপ্তাহে এক থেকে দুবার প্রয়োগ করলে গাছ অনেক বেশি সতেজ থাকবে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং গাছে বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে কখনোই চাল ধোয়া পানি ১-২ দিন জমিয়ে গাছের গোড়ায় দেওয়া যাবে না। এতে গাছের উপকারের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি। তাই দিনের পানি দিনেই প্রয়োগ করা গাছের জন্য ভালো। এতে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং গাছ সুস্থ-সতেজ থাকে।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
টবের আকার: টবের আকার অনুযায়ী মাটির পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
গাছের ধরন: বিভিন্ন ধরনের গাছের জন্য মাটির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
পানি সেচ: মাটি সবসময় আর্দ্র রাখুন, কিন্তু জলাবদ্ধতা এড়িয়ে চলুন।
সার প্রয়োগ: নিয়মিত সার প্রয়োগ করে মাটিতে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দূর করুন।
 
                                             
										 ডেস্ক রিপোর্ট
																ডেস্ক রিপোর্ট								 




















