আজ বিশ্ব নদী দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার নদী রক্ষায় পালিত হয় বিশ্ব নদী দিবস। দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে নদী রক্ষায় সচেতন করা এবং নদীর গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি করা। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ দিবসটি পালন করছে। এ বছরের বিশ্ব নদী দিবস আজ (২৮ সেপ্টেম্বর, রবিবার) সারা বিশ্বে একযোগে উদ্যাপিত হচ্ছে।
এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য জনসম্প্রদায়ের জন্য জলপথ। এ প্রতিপাদ্য নদী তথা জলপথকে আমাদের সমাজ ও জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
বিশ্ব নদী দিবস পালনের উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৮০ সালে। কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির উদ্যোগে সেবার প্রথম পালিত হয়েছিল বিসি রিভারস ডে।
খ্যাতনামা শিক্ষক ও নদীপ্রেমী মার্ক অ্যাঞ্জেলো নদী রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য এ দিবস পালনের সূচনা করেন। বিসি রিভারস ডে সফলভাবে পালিত হওয়ার পর তা আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত হয়।
২০০৫ সালে জাতিসংঘ ‘জীবনের জন্য জল দশক’ ঘোষণা করে এবং সেই সময় থেকেই বিশ্ব নদী দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী ও মানুষের জীবনের নিবিড় সম্পর্ক অনস্বীকার্য। অথচ দেশের অধিকাংশ নদী আজ দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে মৃতপ্রায় অবস্থায়। এ নিয়ে পরিবেশবাদীসহ সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর বাংলাদেশেও এ দিবস নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন হয়ে আসছে।
বিশেষ এই দিনে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ কিছু প্রতিবেদন। যেমন: সমকাল প্রতিবেদন করেছে , ‘বাঁকখালী দখলে সর্বদলীয় ঐক্য’।
এই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে: কক্সবাজার শহরের উত্তর দিক ঘেঁষে মহেশখালী চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে খরস্রোতা নদী বাঁকখালী। এ নদীর মোহনা ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটননগরী কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য। অথচ সেই নদী এখন দখল-দূষণে সংকুচিত হয়ে সরু খালে রূপ নিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থানীয়দের আশা ছিল, বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত হবে। তবে দখলবাজদের চোখ রাঙানিতে বাঁকখালী এখনও যেন বাকরুদ্ধ!
যশোরে কপোতাক্ষ নদের দুরাবস্থা নিয়ে ‘নদ নয় যেন ময়লার ভাগাড়: প্রশাসনের নীরবতায় বর্জ্য-দখলদারদের অবাধ রাজত্ব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা পোস্ট।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:একসময় যে কপোতাক্ষ নদ ছিল স্বচ্ছ পানির স্রোতস্বিনী, আজ তা বর্জ্য ও নিষিদ্ধ জালের কবলে ধুঁকছে। নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই, নদজুড়ে এখন শুধু কচুরিপানা, ময়লার ভাগাড় আর পানিতে পোতা বাঁশের খুঁটি।
বিশ্ব নদী দিবস (২৮ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষ্যে ঝিকরগাছা অংশে ঘুরে দেখা যায় নদীর এই করুণ চিত্র। ঝিকরগাছা, বাঁকড়া ও ছুটিপুর বাজারের সেতুর দুই পাশে নির্বিচারে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বাঁকড়া বাজারের মাছ পট্টির নিচে নদকে বানানো হয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। ফলে ওই পথ দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে।
নদী দিবস পালনে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সামাজিক-পরিবেশবাদি সংগঠন।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নদী সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে গণগোসল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের তিতাস নদীর ভাদুঘরে সামাজিক সংগঠন তরী বাংলাদেশের আয়োজনে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
তরী বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রঞ্জন চন্দ্র দে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গণগোসল উদ্ভোধন করেন। গণগোসলে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নদী প্রেমিরা অংশগ্রহণ করেন। প্রধান অতিথি বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয়ভাবে নদীগুলো দখল ও দুষণ হচ্ছে। আমরা যেন আমাদের নদীগুলোকে অক্ষত রাখতে পারি।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, নদীকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তবে দিন দিন দখল ও দূষনের শিকার হয়ে দেশের নদীপথ আজ হুমকির মুখে। তারা গণগোসলের মাধ্যমে নদীকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছর রাখার দাবি জানান।
আজ সকালে খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের পাড়ে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন।
মানববন্ধন শেষে প্লাস্টিকবর্জ্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। আয়োজিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সচেতন সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস।
এ সময় বক্তব্য দেন অধ্যাপক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, ইউপি সদস্য শঙ্কর বিশ্বাস, ডা. বাসুদেব রায়, অনির্বাণ লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ, পরিবেশকর্মী আফজাল হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের রিয়াদ হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে খুলনা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদী দ্রুত খনন এবং উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা।
পিরোজপুরের কাউখালীতে কচা নদীর তীরে নদীবন্ধু সমাজের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয়েছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কচা নদীর বেকুটিয়া সেতু সংলগ্ন ডলফিন চত্বরে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
‘এসো নদীর বন্ধু হই, নদী সংরক্ষণে ব্রতী রই’ এ বক্তব্য সামনে রেখে ডলফিন চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে বেকুটিয়া সেতু পরিদর্শন করে। পরে কচা নদীর তীরে বৃক্ষ রোপণ, নদীততে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও নদী সুরক্ষায় নদী তীরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় হয়।