সৌদি থেকে বাংলাদেশ,সান্ডাময় নেটপাড়া! কী এই সান্ডা, কফিল?  

সৌদি থেকে বাংলাদেশ,সান্ডাময় নেটপাড়া! কী এই সান্ডা, কফিল?  

হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে সান্ডা নিয়ে মাতামাতি। কোথা থেকে এলো এই সান্ডা? কেনো একে নিয়ে এতো হইচই?

সান্ডা মূলত সরীসৃপ প্রজাতির একটি প্রাণী। ইংরেজি নাম “স্পাইনি-টেইলড লিজার্ড” (spiny-tailed lizard), তবে অনেকে একে “মনিটর লিজার্ড” বা গুইসাপের ছোট জাত মনে করে।

দেখতে কিছুটা গুইসাপের মতো হলেও, আসলে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির। টিকটিকির মতো দেহের গড়ন, তবে আকারে বেশ বড় ও ধীরগতির এই প্রাণীটি মূলত মরুভূমির বাসিন্দা।

সান্ডা আগামিডে পরিবারের টিকটিকিদের একটি গণ। এদের আদি নিবাস আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া)। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের সাধারণত কাঁটালেজী টিকটিকি, ইউরোমাস্টিকস, মাস্টিগুর, সান্ডা টিকটিকি নামে ডাকা হয়।

যেহেতু মরুভূমিতে দিনে প্রচণ্ড গরম থাকে, আবার রাতে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে হিমাঙ্কের নিচে, তাই এই ব্যাপক তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সান্ডার শরীরের চামড়া ঢিলেঢালা ও ভাঁজযুক্ত।

সান্ডা তার শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেহের রঙ পরিবর্তন করতে সক্ষম। উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের দেহ কালো থেকে সাদা বা হলুদ রঙে রূপ নেয়।

এর বড় এবং কাঁটার মতো শক্ত লেজ শত্রু তাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই লেজের জন্য সান্ডাকে “কাঁটালেজী টিকটিকি” নামেও ডাকা হয়।

সান্ডার আদিনিবাস আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যের কিছু এলাকায়। তবুও সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে এই বৃহদাকার টিকটিকি নিয়ে বেশ মাতামাতি দেখা যাচ্ছে।

মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গত কিছুদিন ধরে সান্ডা নিয়ে বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা সান্ডা নিয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যা খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

মধ্যপ্রাচ্যের কিছু বেদুইন জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে এই সান্ডা খেয়ে থাকেন, যাকে সেখানে  ‘ডাব্ব’ বা ‘দব'(ḍabb) নামে ডাকা হয়। সেসব এলাকায় সান্ডার মাংস বসন্তকালে বেশ জনপ্রিয়, যখন এরা মৌসুমি বসন্তকালীন উদ্ভিদ খেয়ে পুষ্টিতে ভরপুর থাকে।

প্রবাসী বাঙালিরা তাদের সান্ডা শিকারের ভিডিওগুলোতে জানাচ্ছেন যে, এই সান্ডা তারা তাদের কফিলদের জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।

কফিল বলতে মূলত সেখানের “নিয়োগকর্তা” বা “মালিক”-কে বোঝানো হচ্ছে। সান্ডার মাংস ও বিরিয়ানি নিয়েও বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এসব ভাইরাল কনটেন্টের কারণেই এখন অনলাইন জগতে সান্ডা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

দেখতে গুইসাপের মতো হলেও সান্ডা বেশ নিরীহ এক তৃণভোজী সরীসৃপ। ঘাস, লতাপাতাই এদের মূল খাবার।

সান্ডার তেল নিয়েও বহু কুসংস্কার রয়েছে। ধারণা করা হয়, এ প্রাণীর লেজ থেকে সংগ্রহ করা তেল যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ বিশ্বাসের ফলে অনেক সময় সান্ডাকে হত্যা করে তেল সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়।

সান্ডার তেল বা, Sanda Oil নামে একধরনের আয়ুর্বেদিক পণ্য বাজারে প্রচলিত রয়েছে।

তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এখনো সান্ডার তেলের কোনো কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি। বরং এসব কাজ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং প্রাণী সংরক্ষণের পরিপন্থী।

সংরক্ষণচর্চার ক্ষেত্রে এই ধরনের সরীসৃপ প্রাণী সিংহ বা বাঘের ন্যায় পরিচিত ও আকর্ষণীয় প্রাণীদের মতো তেমন মনোযোগ পায় না।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (IUCN) এর সংকটাপন্ন তালিকায় সান্ডার স্থান রয়েছে।

বাংলাদেশে অনেক সময় গুইসাপ জাতীয় প্রাণীকে সান্ডা ভেবে ভুল করা হয়। এই এলাকায় সান্ডার বিচরণ নেই, যেহেতু এটা মরুভূমির প্রাণী।

যদি এখানে সত্যি সান্ডার দেখা পাওয়াও যায়, তবে সেটি অবৈধভাবে আমদানিকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আপলোডকারীর তথ্য

Shuvo

সৌদি থেকে বাংলাদেশ,সান্ডাময় নেটপাড়া! কী এই সান্ডা, কফিল?  

আপডেট সময় ০২:৪৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে সান্ডা নিয়ে মাতামাতি। কোথা থেকে এলো এই সান্ডা? কেনো একে নিয়ে এতো হইচই?

সান্ডা মূলত সরীসৃপ প্রজাতির একটি প্রাণী। ইংরেজি নাম “স্পাইনি-টেইলড লিজার্ড” (spiny-tailed lizard), তবে অনেকে একে “মনিটর লিজার্ড” বা গুইসাপের ছোট জাত মনে করে।

দেখতে কিছুটা গুইসাপের মতো হলেও, আসলে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির। টিকটিকির মতো দেহের গড়ন, তবে আকারে বেশ বড় ও ধীরগতির এই প্রাণীটি মূলত মরুভূমির বাসিন্দা।

সান্ডা আগামিডে পরিবারের টিকটিকিদের একটি গণ। এদের আদি নিবাস আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া)। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের সাধারণত কাঁটালেজী টিকটিকি, ইউরোমাস্টিকস, মাস্টিগুর, সান্ডা টিকটিকি নামে ডাকা হয়।

যেহেতু মরুভূমিতে দিনে প্রচণ্ড গরম থাকে, আবার রাতে তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে হিমাঙ্কের নিচে, তাই এই ব্যাপক তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সান্ডার শরীরের চামড়া ঢিলেঢালা ও ভাঁজযুক্ত।

সান্ডা তার শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেহের রঙ পরিবর্তন করতে সক্ষম। উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের দেহ কালো থেকে সাদা বা হলুদ রঙে রূপ নেয়।

এর বড় এবং কাঁটার মতো শক্ত লেজ শত্রু তাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই লেজের জন্য সান্ডাকে “কাঁটালেজী টিকটিকি” নামেও ডাকা হয়।

সান্ডার আদিনিবাস আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যের কিছু এলাকায়। তবুও সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে এই বৃহদাকার টিকটিকি নিয়ে বেশ মাতামাতি দেখা যাচ্ছে।

মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গত কিছুদিন ধরে সান্ডা নিয়ে বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিরা সান্ডা নিয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যা খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

মধ্যপ্রাচ্যের কিছু বেদুইন জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে এই সান্ডা খেয়ে থাকেন, যাকে সেখানে  ‘ডাব্ব’ বা ‘দব'(ḍabb) নামে ডাকা হয়। সেসব এলাকায় সান্ডার মাংস বসন্তকালে বেশ জনপ্রিয়, যখন এরা মৌসুমি বসন্তকালীন উদ্ভিদ খেয়ে পুষ্টিতে ভরপুর থাকে।

প্রবাসী বাঙালিরা তাদের সান্ডা শিকারের ভিডিওগুলোতে জানাচ্ছেন যে, এই সান্ডা তারা তাদের কফিলদের জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।

কফিল বলতে মূলত সেখানের “নিয়োগকর্তা” বা “মালিক”-কে বোঝানো হচ্ছে। সান্ডার মাংস ও বিরিয়ানি নিয়েও বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এসব ভাইরাল কনটেন্টের কারণেই এখন অনলাইন জগতে সান্ডা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

দেখতে গুইসাপের মতো হলেও সান্ডা বেশ নিরীহ এক তৃণভোজী সরীসৃপ। ঘাস, লতাপাতাই এদের মূল খাবার।

সান্ডার তেল নিয়েও বহু কুসংস্কার রয়েছে। ধারণা করা হয়, এ প্রাণীর লেজ থেকে সংগ্রহ করা তেল যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এ বিশ্বাসের ফলে অনেক সময় সান্ডাকে হত্যা করে তেল সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়।

সান্ডার তেল বা, Sanda Oil নামে একধরনের আয়ুর্বেদিক পণ্য বাজারে প্রচলিত রয়েছে।

তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এখনো সান্ডার তেলের কোনো কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি। বরং এসব কাজ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং প্রাণী সংরক্ষণের পরিপন্থী।

সংরক্ষণচর্চার ক্ষেত্রে এই ধরনের সরীসৃপ প্রাণী সিংহ বা বাঘের ন্যায় পরিচিত ও আকর্ষণীয় প্রাণীদের মতো তেমন মনোযোগ পায় না।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (IUCN) এর সংকটাপন্ন তালিকায় সান্ডার স্থান রয়েছে।

বাংলাদেশে অনেক সময় গুইসাপ জাতীয় প্রাণীকে সান্ডা ভেবে ভুল করা হয়। এই এলাকায় সান্ডার বিচরণ নেই, যেহেতু এটা মরুভূমির প্রাণী।

যদি এখানে সত্যি সান্ডার দেখা পাওয়াও যায়, তবে সেটি অবৈধভাবে আমদানিকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।