প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের বৃক্ষরোপণ অভিযান ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ-২০২৫’ কর্মযজ্ঞের এক অন্যরকম দিন ছিল গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর)। এদিন মিরপুর-১২ নম্বরের বাবুল্যান্ডও যেন পেয়ে যায় নামের সার্থকতা! ছোট্টবাবুদের প্রিয় ইনডোর প্লেগ্রাউন্ড বাবুল্যান্ডে আসেন প্রকৃতিবন্ধু মুকিত মজুমদার বাবু। প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের উদ্যোগে চলমান বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে দেশজুড়েই। কিন্তু বাবুল্যান্ডে শিশুদের মাঝে যে স্বতঃস্ফুর্ততা, তা যেন আর কোথাও দেখা যায়নি। শিশুমনের সরলতায় বাবুল্যান্ডে ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ আয়োজন তাই পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।

শিশুমনে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার বীজ বুনে যাচ্ছেন চিরসবুজ মানুষ মুকিত মজুমদার বাবু। প্রকৃতি রক্ষায় শিশুদের সম্পৃক্ত করা তাঁর সুদূরপ্রসারী ভাবনার অংশ। আর একারণেই বাবুল্যান্ডের মতো শিশুদের প্রিয় জায়গাকে বেছে নিয়ে গল্পের ছলে পরিবেশের বার্তা দেয়া, গাছের চারা উপহার দেয়ার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বাবুল্যান্ড সাজানো হয়েছিল গাছের ছবি দিয়ে, ছবির সঙ্গে ছিল নানা বার্তা, যেমন: ছোট হাতে সবুজের স্বপ্ন, ছোট্ট চারা বড় স্বপ্ন, গাছ লাগাও পৃথিবী বাঁচাও এবং আমার গাছ আমার বন্ধু।
আয়োজনের শুরুতেই শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে গল্প নিয়ে হাজির হয় বাবুল্যান্ডে শিশুদের প্রিয় চরিত্র তুতুন, ক্যাপ্টেন কিকো এবং গাব্বুশ। এই চরিত্রদের মাধ্যমে মুকিত মজুমদার বাবুর লেখা অ্যানিমেটেড বই বর্ণিল প্রজাপতির গল্প পড়ে শোনানো হয়। গল্পটিতে নানা (মুকিত মজুমদার বাবু) তাঁর নাতি কায়সান ও নাতনী কায়নাজকে শেখান প্রকৃতিতে প্রজাপতির অবদানের কথা, যা দুই শিশুর মনে প্রজাপতি রক্ষার আগ্রহ জাগিয়ে তোলে।
এই গল্পের পর শিশুদের গাছ কিভাবে লাগাতে হয় তা সহজ করে শেখাতে বড় স্ক্রিনে দেখানো হয় প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের তৈরি করা একটি অ্যানিমেশন। এই ভিডিওতে দুই শিশুকে গাছ লাগানোর কৌশল দেখিয়ে দেন ওদের বাবা, তিনি শিখিয়ে দেন কিভাবে গর্ত করে, জৈব সার দিয়ে চারা লাগাতে হয়, গাছ সোজা রাখতে কিভাবে একটি লাঠির সাথে বাঁধতে হয়, কিভাবে চারাগাছকে রক্ষা করতে হয়।
অ্যানিমেশনটি দেখানোর পর এধরনের ব্যতিক্রমী আয়োজন সম্পর্কে বাবুল্যান্ডের চেয়ারম্যান ইশনাদ চৌধুরী বলেন, ‘মুকিত মজুমদার বাবুর সঙ্গে প্রথম দেখাতেই ওনার মন-মানসিকতার সঙ্গে চমৎকারভাবে আমার মনোভাবের মিল খুঁজে পেয়েছিলাম। এরপরেই আজকের এই আয়োজন। আশা করি শিশু ও তাদের অভিভাবকরা বুঝতে পারবেন গাছ আমাদের জন্য কত জরুরী। আমাদের প্রকৃতিকে ভালো রাখতে প্রকৃতি-পরিবেশকে ভালোবাসা দরকার, শিশুদেরও তা শেখানোর দরকার।’

এরপর গাছের চারা উপহার দেয়ার আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিত মজুমদার বাবু শিশুদেরকে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে বক্তব্য রাখেন।
“কেমন আছো তোমরা সবাই?” শুরুতেই তাঁর এই প্রশ্নের উত্তরে সমস্বরে শিশুরা হইহই করে জবাব দেয় “ভালো।”
এরপর এই ছোট্টবন্ধুদের যেন বুঝতে সুবিধা হয় সেজন্য সহজ করে প্রকৃতিবন্ধু বলেন, ‘এখানেতো তোমরা খেলো, আজকে তোমরা খেলতে খেলতে শিখছো জীবনের জন্য কিছু দরকারি কথাও। একটু কঠিন-কঠিন কথা তবু মন দিয়ে শুনলে তোমরা বুঝবে আশা করি। গাছের ডাল ভাঙা, পাতা ছেড়া-ফুল ছেড়া ভাল নয়, আমাদের গাছের যত্ন নিতে হবে, পরিবেশের বন্ধু গাছের কোনো ক্ষতি আমরা করবো না।

গাছ আমাদের অক্সিজেন দিচ্ছে, আমরা বেঁচে থাকতে পারছি, গাছ ফুল-ফল দিচ্ছে। নিজের বোনা গাছে ফুল-ফল ধরলে ভীষণ আনন্দ হয়। এছাড়া গাছ প্রজাপতি,পাখি, কাঠবিড়ালীসহ নানা প্রাণীকে আশ্রয় দিচ্ছে এই গাছ। গাছ সবুজ, সুন্দর, এই সবুজে আমাদেরও চোখও কিন্তু ভালো থাকে। যদি সবুজ প্রকৃতিতে থাকো তাহলে তোমাদের পড়াশোনাতেও মনোযোগ আসবে।’
তিনি শিশুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গাছের যত্ন অবশ্যই করতে হবে। এছাড়া পরিবেশের যতো প্রাণী আছে, যেমন ব্যাঙ, পাখি। এদের কোনো ক্ষতি করা যাবে না, ঢিল ছোড়া যাবে না। এই প্রাণীরাও পরিবেশের জন্য কাজ করে, আমাদের উপকার করে। পাখি ফল খেয়ে উড়ে উড়ে নানা জায়গায় নতুন গাছ জন্মাতে সাহায্য করে। এই যে ছোট্টবন্ধুরা, তোমরা যখন ছোটবেলা থেকেই পরিবেশকে প্রাণীদের রক্ষা করা শিখবে তখন বড়রাও তোমাদের কথা শুনবে। পরিবেশ-প্রকৃতি যদি ভালো থাকে আমরা সবাই ভালো থাকবো।’
বক্তব্য শেষে শিশুদের হাতে উপহার হিসেবে গাছের চারা তুলে দেন মুকিত মজুমদার বাবু ও ইশনাদ চৌধুরী। শিশু ও তাদের অভিভাবকদের হাতে হাতে তুলে দেয়া হয় নানা ফলদ গাছের চারা।
শিশুরা স্বভাবসুলভ আগ্রহে গাছের চারা হাতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, অভিভাবকদের মধ্যেও ছিল দারুণ আগ্রহ।
স্বল্প জায়গায় এত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে শতাধিক গাছের চারা তুলে দেয় প্রকৃতি ও জীবন টিমের সদস্যরা।